ঢাকা ০২:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কে এই শরীফ জহির? এলডিসি দেশগুলোর জন্য ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দে ইইউ-এর সমর্থন চাইল বাংলাদেশ কক্সবাজার সফরকালে যৌথ বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে সালাউদ্দিন চৌধুরী ডিসেম্বরে ভারতের সাথে এফওসি বৈঠক, এজেন্ডা এখনো চূড়ান্ত নয় গাজীপুরে ঝুকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে ফুটওভার ব্রীজের দাবীতে মানববন্ধন গাজীপুরে ২১০ পিস ইয়াবা ও সাড়ে ১১ লাখ টাকাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ ইউএনও এবং পিআইও’র বিরুদ্ধে ফরিদপুরে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা, জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রধান শিক্ষক নিহত খালেদা জিয়া যে কোনো সময়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যেতে পারেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পল্লবীতে কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষোভের বলি ফয়সাল

রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে অন্যতম পেপার সানি গ্রুপ ও গালকাটা রাব্বী গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তারে এই দুই গ্রুপের রেষারেষি দীর্ঘদিনের। পাঁচ মাস আগে ২০ হাজার টাকা দেনা-পাওনা নিয়ে রাব্বী গ্রুপের নাডা শাহিনের সঙ্গে পেপার সানির দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। সম্প্রতি নারীঘটিত এক কা-ে সেটি নতুন মাত্রা পায়। পরস্পরকে শায়েস্তা করতে আদাজল খেয়ে নামে দুই গ্রুপই; চলে দফায় দফায় মহড়া; মোটরবাইক নিয়ে শোডাউন। সর্বশেষ, গত শনিবার পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকে রাব্বী গ্রুপের হামলায় প্রাণ হারায় সানি গ্রুপের মো. ফয়সাল (২২)।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতির পূঞ্জীভূত ক্ষোভের বলি মুড়াপাড়া বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা ফয়সাল। এদিকে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের পর দফায় দফায় গালকাটা রাব্বীর ই-ব্লকের বাসায় হামলা-ভাঙচুর চালায় পেপার সানি গ্রুপ।

ফয়সাল হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মো. শাহাদাত হোসেন কিশোর গ্যাং রাব্বী গ্রুপের প্রধান গালকাটা রাব্বী, টান আকাশ, নাডা শাহিনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অচেনা আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলো- মো. মুরাদ, ইয়াসিন, সাইফুল ইসলাম সাইমন, সাজ্জাত, কাল্লু, আব্দুল্লাহ, পারভেজ, তানজিলা। পুলিশ ঘটনার দিন রাতেই এজাহারভুক্ত ৫ ও ৬ নম্বর আসামি ইয়াসিন ও সাইমনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে। ইয়াসিন আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ দুজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে এজাহারের বাইরেও তিন যুবককে আইনের আওতায় আনা হয়। তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে ইয়াসিন ও সাইমন বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত রাব্বী এবং তার সহযোগীদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই নুর আলম গাজী গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, ফয়সাল হত্যাকা-ে এজাহারভুক্ত দুজনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন কারাগারে আছে। অন্যদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা বেশকিছু গুরুত্বপূূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এ তিনজনের নাম ও তাদের বক্তব্য প্রকাশ করতে চাননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

নিহত ফয়সালের বাবা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, হারানো ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। এখন ছেলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচার দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, তাই কিশোর গ্যাংয়ের সমূল উৎপাটনে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত ফয়সাল পল্লবী থানা এলাকায় পাঞ্জাবির কারচুপির কাজ করত। ৫ মাস আগের ঘটনা। নাডা শাহিনের কাছে ফয়সালের গুরু পেপার সানির ২০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। সেই টাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৬ হাজার ৫শ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি সাড়ে তিন হাজার টাকা না দেওয়ায় গত ১৫ মার্চ রাত সোয়া ৮টার দিকে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২ মুড়াপাড়া ক্যাম্প ২১ নম্বর বাসার সামনে নাডা শাহিনের সঙ্গে দেখা হলে পাওনা টাকা ফেরত চায় পেপার সানি। নাডা শাহিন আর কোনো টাকা-পয়সা দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে টাকা চাইলে উচিত শিক্ষা দেওয়ারও হুমকি দেয়। এর জেরে শুরু হয় কথাকাটাকাটি। এ সময় পেপার সানির সঙ্গে তার খালাতো ভাই মাসুমও ছিল। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও কিল-ঘুষির ঘটনাও ঘটে।

অন্যদিকে গত ১৬ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে মুড়াপাড়া ক্যাম্পের সামনে গান গাওয়া নিয়ে নাডা শাহিনের ছোট বোন তানজিলার (২৩) সঙ্গে নিহত ফয়সাল ও তার বন্ধু রানার তর্ক হয়। এর জেরে রাব্বী গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাডা শাহিন যুক্তি করে, সানি গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফয়সাল, রানা ও তাদের আরও দুই বন্ধু অটোরিকশায় পল্লবী থানাধীন ২নং কমিউনিটি সেন্টার থেকে ইফতার শেষ করে বাসায় আসছিল। পূর্র্বপরিকল্পিতভাবে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২, ব্লক-সি, রোড-১৩, বাসা-২১১ এর সামনের রাস্তায় আসামাত্রই রাব্বী গ্রুপের প্রায় ২ ডজন সদস্য চাপাতি, রামদা, সুইচ গিয়ার, চাকুু প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফয়সাল ও তার বন্ধুদের পথরোধ করে। একপর্যায়ে টান আকাশ, নাডা শাহিন, গালকাটা রাব্বী, মুরাদ, ইয়াসিনসহ অন্যরা রামদা, চাপাতি, সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে ফয়সালকে এলোপাতাড়ি কোপায়। তাকে উদ্ধারে বন্ধু রানা এগিয়ে গেলে তাকেও রামদা, চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। আহতদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই বন্ধুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন। রানার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

পুলিশ আরও জানায়, এ দুই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। এদের এক একটি গ্রুপে ২০-৩০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তারা পল্লবীসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদকসেবন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য জাহিরে বিকট শব্দে গান বাজায়; দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায় এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। তরুণী-কিশোরীদের ইভটিজিং করা ছাড়াও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি-মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজেও জড়িত গ্রুপের সদস্যরা। তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকার অন্য গ্রুপের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়। কোনো কাণ্ডে কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতা জাহির করতে মারামারিসহ খুন করতেও দ্বিধা করে না। গ্রুপ দুটির বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে পল্লবীসহ অনেক থানায় মাদক, চুরি, মারামারি ও হত্যাচেষ্টার ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যায় জড়িতেদের গ্রেপ্তারে কয়েকটি টিম করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কে এই শরীফ জহির?

পল্লবীতে কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষোভের বলি ফয়সাল

আপডেট টাইম : ০৬:৫৯:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় দুর্ধর্ষ কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে অন্যতম পেপার সানি গ্রুপ ও গালকাটা রাব্বী গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তারে এই দুই গ্রুপের রেষারেষি দীর্ঘদিনের। পাঁচ মাস আগে ২০ হাজার টাকা দেনা-পাওনা নিয়ে রাব্বী গ্রুপের নাডা শাহিনের সঙ্গে পেপার সানির দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। সম্প্রতি নারীঘটিত এক কা-ে সেটি নতুন মাত্রা পায়। পরস্পরকে শায়েস্তা করতে আদাজল খেয়ে নামে দুই গ্রুপই; চলে দফায় দফায় মহড়া; মোটরবাইক নিয়ে শোডাউন। সর্বশেষ, গত শনিবার পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকে রাব্বী গ্রুপের হামলায় প্রাণ হারায় সানি গ্রুপের মো. ফয়সাল (২২)।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতির পূঞ্জীভূত ক্ষোভের বলি মুড়াপাড়া বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা ফয়সাল। এদিকে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের পর দফায় দফায় গালকাটা রাব্বীর ই-ব্লকের বাসায় হামলা-ভাঙচুর চালায় পেপার সানি গ্রুপ।

ফয়সাল হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মো. শাহাদাত হোসেন কিশোর গ্যাং রাব্বী গ্রুপের প্রধান গালকাটা রাব্বী, টান আকাশ, নাডা শাহিনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অচেনা আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলো- মো. মুরাদ, ইয়াসিন, সাইফুল ইসলাম সাইমন, সাজ্জাত, কাল্লু, আব্দুল্লাহ, পারভেজ, তানজিলা। পুলিশ ঘটনার দিন রাতেই এজাহারভুক্ত ৫ ও ৬ নম্বর আসামি ইয়াসিন ও সাইমনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে। ইয়াসিন আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ দুজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে এজাহারের বাইরেও তিন যুবককে আইনের আওতায় আনা হয়। তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে ইয়াসিন ও সাইমন বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত রাব্বী এবং তার সহযোগীদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই নুর আলম গাজী গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, ফয়সাল হত্যাকা-ে এজাহারভুক্ত দুজনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন কারাগারে আছে। অন্যদের ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা বেশকিছু গুরুত্বপূূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এ তিনজনের নাম ও তাদের বক্তব্য প্রকাশ করতে চাননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

নিহত ফয়সালের বাবা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, হারানো ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। এখন ছেলের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং তাদের বিচার দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, তাই কিশোর গ্যাংয়ের সমূল উৎপাটনে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত ফয়সাল পল্লবী থানা এলাকায় পাঞ্জাবির কারচুপির কাজ করত। ৫ মাস আগের ঘটনা। নাডা শাহিনের কাছে ফয়সালের গুরু পেপার সানির ২০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। সেই টাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৬ হাজার ৫শ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি সাড়ে তিন হাজার টাকা না দেওয়ায় গত ১৫ মার্চ রাত সোয়া ৮টার দিকে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২ মুড়াপাড়া ক্যাম্প ২১ নম্বর বাসার সামনে নাডা শাহিনের সঙ্গে দেখা হলে পাওনা টাকা ফেরত চায় পেপার সানি। নাডা শাহিন আর কোনো টাকা-পয়সা দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে টাকা চাইলে উচিত শিক্ষা দেওয়ারও হুমকি দেয়। এর জেরে শুরু হয় কথাকাটাকাটি। এ সময় পেপার সানির সঙ্গে তার খালাতো ভাই মাসুমও ছিল। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও কিল-ঘুষির ঘটনাও ঘটে।

অন্যদিকে গত ১৬ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে মুড়াপাড়া ক্যাম্পের সামনে গান গাওয়া নিয়ে নাডা শাহিনের ছোট বোন তানজিলার (২৩) সঙ্গে নিহত ফয়সাল ও তার বন্ধু রানার তর্ক হয়। এর জেরে রাব্বী গ্যাংয়ের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নাডা শাহিন যুক্তি করে, সানি গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার। গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফয়সাল, রানা ও তাদের আরও দুই বন্ধু অটোরিকশায় পল্লবী থানাধীন ২নং কমিউনিটি সেন্টার থেকে ইফতার শেষ করে বাসায় আসছিল। পূর্র্বপরিকল্পিতভাবে পল্লবী থানাধীন সেকশন-১২, ব্লক-সি, রোড-১৩, বাসা-২১১ এর সামনের রাস্তায় আসামাত্রই রাব্বী গ্রুপের প্রায় ২ ডজন সদস্য চাপাতি, রামদা, সুইচ গিয়ার, চাকুু প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফয়সাল ও তার বন্ধুদের পথরোধ করে। একপর্যায়ে টান আকাশ, নাডা শাহিন, গালকাটা রাব্বী, মুরাদ, ইয়াসিনসহ অন্যরা রামদা, চাপাতি, সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে ফয়সালকে এলোপাতাড়ি কোপায়। তাকে উদ্ধারে বন্ধু রানা এগিয়ে গেলে তাকেও রামদা, চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। আহতদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুই বন্ধুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন। রানার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

পুলিশ আরও জানায়, এ দুই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পল্লবীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। এদের এক একটি গ্রুপে ২০-৩০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তারা পল্লবীসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদকসেবন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য জাহিরে বিকট শব্দে গান বাজায়; দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায় এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। তরুণী-কিশোরীদের ইভটিজিং করা ছাড়াও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি-মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজেও জড়িত গ্রুপের সদস্যরা। তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকার অন্য গ্রুপের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়। কোনো কাণ্ডে কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতা জাহির করতে মারামারিসহ খুন করতেও দ্বিধা করে না। গ্রুপ দুটির বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে পল্লবীসহ অনেক থানায় মাদক, চুরি, মারামারি ও হত্যাচেষ্টার ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যায় জড়িতেদের গ্রেপ্তারে কয়েকটি টিম করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাঁড়াশি অভিযান চলছে, জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।