মঞ্জুরুল ইসলাম রতন :
ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার নতুন সময় নির্ধারণ প্রচলিত অর্থবছরের সঙ্গে সমন্বয় করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের সময়কাল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, কর আদায় প্রক্রিয়া অধিকতর সুষম, স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে এই কর আদায়ের সময় হবে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। শনিবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়নে ভূমিসেবা সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ভূমিসেবা সপ্তাহ আগামীকাল রোববার থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে। সারাদেশের ভূমি অফিস, এসিল্যাড অফিস ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আজ থেকেই এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তবে ঢাকার এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় ঢাকায় আজ এ কর্মসূচি পালন করা হয়নি। আগামীকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে ভূমি সপ্তাহ পালন করা হবে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এর আগে বাংলা বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হত, যা জাতীয় অর্থবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।ভূমিমন্ত্রী বলেন, কর আদায় সময়ের পরিবর্তনে আদায় প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ হবে। এই নতুন সময়সূচি দেশের ভূমি রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং রাজস্ব আদায়ে গতিশীলতা আনবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী আরও বলেন, ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশনসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ- নারী অধিকার নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা গতিশলীল করা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু বিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব উদ্যোগ দেশের মানুষের ভূমি সংক্রান্ত অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। নিজের ভূমি অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারলে মানুষ আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন হয়ে উঠবে। এটি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।ভূমি সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অনলাইনে জমির মালিকানার তথ্য রয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখের বেশি। ডাক বিভাগের মাধ্যমে নাগরিকের ঠিকানায় এখন পযন্ত প্রায় ৮ লাখের বেশি খতিয়ান পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে সরাসরি ০৯৬১২৩১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল যঃঃঢ়ং://ষধহফ.মড়া.নফ/ অথবা ই-খতিয়ান মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করলে খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ এর সত্যায়িত কপি ১৯২টি দেশে নাগরিকের নিজ-নিজ ঠিকানায় প্রেরণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে মূল খতিয়ান থেকে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ানের ধারাবাহিক ক্রম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে ভূমি সচিব বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করেছে এবং নতুন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ আরও সহজ করবে। জনগণকে দ্রæত ও সুষ্ঠুভাবে জমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানে সহায়তা করবে। নতুন জনবল নিয়োগের ফলে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, ভূমিসেবা সপ্তাহ চলাকালে ই-নামজারির আবেদন করার বিষয়ে অবহিতকরণ ও সহযোগিতা প্রদান, নিষ্পত্তিকৃত এলএ কেসের ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান, অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ, অনলাইনে আবেদনকৃত মৌজা ম্যাপ ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে চলমান জরিপ কার্যক্রম বিষয়ে গণশুনানি, আপত্তি/আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ ও রেকর্ড হস্তান্তরসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে।জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ভূমি অফিসে সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথ স্থাপন করা হবে। সেখানে একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। এবারই প্রথম ৮টি বিভাগে বিশেষ ৮টি গাড়ি ভ্রাম্যমান স্মার্ট ভূমি সেবা প্রদান করবে। এ ছাড়া ভূমিসেবা নিয়ে সহজবোধ্য বই ‘ভূমি আমার ঠিকানা’ বিতরণ করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভূমি আপিল বোর্ডর চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।