নিজস্ব প্রতিবেদক :
যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহকদের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নিয়ে তা জীবন বীমায় রূপান্তর করে জালিয়াতি ও প্রতারণায় জড়িত কোম্পানির সাবেক এএমডি ও এনআরবি ইসলামিক লাইফের বর্তমান সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার অগ্রগতি জানতে চেয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
তিনি ছাড়াও যমুনা লাইফের তৎকালীন সিইও মো. কামরুল হাসান খন্দকার ও এসএএমডি মো. রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (৩ জুলাই) কর্তৃপক্ষের পরিচালক (আইন) উপসচিব মোহা. আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ যমুনা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।
একই কর্মকর্তা সাক্ষরিত অন্য একটি অফিস আদেশ দেওয়া হয়েছে এনআরবি ইসলামিক লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে। ওই অফিস আদেশের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছে- এই কোম্পানিতে চাকরি নেওয়ার সময় জসিম উদ্দিন পূর্বের কোম্পানির ছাড়পত্র দাখিল করেছে কিনা। আগামী ৩ কার্য দিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে এ তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
যমুনা লাইফের সিইওকে পাঠানো অফিস আদেশে বলা হয়েছে, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে কোম্পানির ৯৩ জন গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করা হয়। কোম্পানির তৎকালীন সিইও জনাব মো. কামরুল হাসান খন্দকার, এএমডি জনাব মো. জসিম উদ্দিন, এসএএমডি জনাব মো. রবিউল ইসলাম উক্ত অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় এবং
কোম্পানিকে অবহিত করা হয়। উক্ত অর্থ আত্মসাতে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার সর্বশেষ অবস্থার বিষয়টি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ অবগত নয় ।
গত ২ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মো জসিম উদ্দিন এনআরবি ইসলামিক লাইফে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেছেন। যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে জসিম উদ্দিন অব্যাহতি নিয়েছেন কিনা এবং অব্যাহতি নিলে তাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে কিনা সে তথ্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে দাখিল করা প্রয়োজন। ইটি বিষয়ের তথ্য (প্রমাণকসহ) আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করার জন্য বলা হলো।
এনআরবি ইসলামিক লাইফের সিইওকে পাঠানো অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ২ জুলাই পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, মো. জসিম উদ্দিন এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেছেন এবং উক্ত কোম্পানিতে যোগদানের
পূর্বে তিনি যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে এএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্তৃপক্ষের জারিকৃত সার্কুলার অনুসারে এক কোম্পানির চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে অন্য কোম্পানিতে যোগদান করলে পূর্বের কোম্পানির ছাড়পত্রের প্রয়োজন। এই অবস্থায় জসিম উদ্দিন যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে ছাড়পত্রসহ এনআরবি ইসলামিক লাইফে যোগদান করেছেন কিনা সে তথ্য (প্রমাণকসহ) আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করার জন্য বলা হলো।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২ জুলাই) “চট্টগ্রাম ‘কেলেঙ্কারি’র মাস্টারমাইন্ড জসিম এখন এনআরবি লাইফে!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক পত্রিকাসহ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল। ওই প্রতিবেদনে আইডিআরএ’র তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রায় ৯৩ জন গ্রাহককে স্থায়ী আমানত বা এফডিআরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই কোটি ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জীবন বীমায় রূপান্তরের নেপথ্যের নায়ক জসিম উদ্দিন। এফডিআরে পাঁচ শতাংশ কমিশন হলেও সেখানে তারা এফডিআরের নামে টাকা নিয়ে জালিয়াতি করে তা সিঙ্গেল বীমায় রূপান্তর করে ৯৫ শতাংশ কমিশন বাগিয়ে নিয়েছে। এই জসিম উদ্দিন তখন অ্যাডিশনাল এমডির পাশাপাশি যমুনা লাইফের মার্কেটিং বিভাগেরও প্রধান ছিলেন।