বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেছেন, “আমাদের সমাজকে নতুন করে গড়ার জন্য, মাদকমুক্ত করার জন্য সকলের ঐক্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন। যে স্বৈরাচারকে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রুখে দাঁড়িয়েছি, যার বিরুদ্ধে অনেক নেতাকর্মী গুম-খুন ও হত্যার শিকার হয়েছেন, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনও না হয় – সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”
সোমবার সন্ধ্যায় রূপনগরে সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের আয়োজনে আয়োজিত উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের বহু ছাত্র ও নেতাকর্মী রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, তা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা একটি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে না পারে।”
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে আলোচনায় মাদক সমস্যাকে জাতীয় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করে আমিনুল হক বলেন, “মাদক এখন শুধু রূপনগর-পল্লবীর সমস্যা নয়, এটি সারা দেশের সমস্যা। গত ১৭ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাদক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। যতই শক্তিশালী হোক, মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তাদের যেন সহজে জামিন না হয়, সে বিষয়েও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলবো।”
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু মাদক কারবারিকে দোষ দিলেই চলবে না, নিজের সন্তানদের প্রতিও নজর দিতে হবে। ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমেই আমরা একটি মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে পারি।”
দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
জানিয়ে স্থানীয় অপরাধীদের বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়ে আমিনুল হক বলেন, “এলাকায় যারা দুষ্কৃতকারী আছে, তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেনো, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না, তারা যদিও আমাদের দলের লোকও হয়। সমাজ পরিবর্তনে আন্তরিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
নির্বাচনে জয়ী হলে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের অঙ্গীকার করে এলাকার জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচিত করেন, তাহলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি – এই এলাকার খেলার মাঠ, ড্রেনেজ, জলাবদ্ধতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি সমস্যার সমাধানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।”
আওয়ামী দোসরদের বিচারের হুঁশিয়ারি
দিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে আমিনুল হক বলেন, “বিএনপিতে আওয়ামী দোসরদের কোনো জায়গা নেই। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা এখনও বসে আছে, তারা আওয়ামী স্বৈরাচারকে সহায়তা করেছে—আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
বক্তব্যের শেষ দিকে তিনি স্থানীয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, “আমি আপনাদের পাশে আছি, আপনারাও আমাদের পাশে থাকুন। আমরা একসাথে একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।”
উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ, মাহাবুব আলম মন্টু, রূপনগর থানা বিএনপি আহবায়ক জহিরুল হক, যুগ্ম আহবায়ক ইন্জিঃ মজিবুল হক, আলী আহমেদ রাজু, থানার সিনিয়র সদস্য এম আশরাফুল ইসলাম, রূপনগর আবাসিক জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি বিএনপি নেতা মোঃ শাহআলম মোল্লা, রূপনগর থানা ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি শফিকুর রহমান মামুন, সাধারণ সম্পাদক খোকন মাদবর, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম, সহসভাপতি মোঃ ফুতুন মিয়া, স্বেচ্ছাসেবকদলের সাজেদুল আলম টুটুল, যুবদলের নাঈম হোসেন, ছাত্রদলের কাওসার মল্লিক প্রমুখ।
এরআগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত মিরপুর থানার ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়ার সহসভাপতি শহীদ আব্দুল্লাহ কবির স্বরনে স্বরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তিনি।
বিকেলে পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং এ সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত বৃক্ষ রোপন কর্মসূচিতে অংশ নেন আমিনুল হক।