ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি-
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনকে ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব কিশোর, কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতা আলমগীর হোসেন সোহান, প্রাক্তন মন্ত্রী মাজেদুল হকের কন্যা ডা. সিমিন মজিদ, সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল আলম হিরো সহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
এর মধ্যে আলোচনায় আছেন, মাগুরার সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাগুরা জেলা বিএনপি আহবায়ক আলহাজ্ব আলী আহমেদ। সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া এ নেতা ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তাঁর পিতা দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আলী আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় থেকেই ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
তিনবার রাঘবদাইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। একাধিকবার মাগুরা জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতীয় স্বর্ণপদকের মাধ্যমে পুরষ্কৃত হন। তিনি এতো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ছিলেন যে,১৯৯৪ সালে আসাদ মিয়া মারা যাওয়ার পর মাগুরা-২ এর উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করার গুরুদায়িত্ব আসে তার উপরে। লুৎফুজ্জামান বাবর সহ তৎকালীন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মাগুরাতে আসেন এই প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করতে। পরবর্তীতে এই আলোচিত উপ-নির্বাচনের প্রচারণার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজে আসেন মাগুরাতে। বেগম খালেদা জিয়ার আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে আলী আহমেদ তার ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করে ঐ নির্বাচনের প্রচারণায় মাগুরা আসা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে মাগুরা সার্কিট হাউজ থেকে বিতাড়িত করেন। ঢাকা রোডে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে হাসিনা বক্তৃতা দেন, “আলী আহমেদ কাজটা ঠিক করে নাই, আলী আহমেদ-কে আমি দেখে নিব”। ১৯৯০ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে একের পর এক জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক, দুইবার সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিব ও দুইবার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, এমনকি তাঁর বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনার মধ্যেও তিনি রাজপথ ছেড়ে পালাননি। আলোচিত ‘সিক্স মার্ডার মামলা’সহ নানা মামলার আসামি হলেও দৃঢ় নেতৃত্বে কর্মীদের পাশে থেকেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা তাঁর অন্যতম বিশেষ দক্ষতা। করোনা মহামারি হোক বা স্থানীয় দুর্যোগে—আলী আহমেদ এর ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সহায়তা ও সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও মডেল জেলা হিসেবে মাগুরাকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন আলী আহমেদ। বিশেষ করে বেকারত্ব নিরসন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন কে তিনি নিজের অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে জনপ্রিয়তায় তিনি শীর্ষে রয়েছেন এবং সাধারণ জনগণ তাঁকেই সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান।
অন্যদিকে মাগুরা জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন খান,ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিনাথপুর-আবালপুর গ্রামের এই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের (জালাল-বাবলু) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং শহীদুল্লাহ হল ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
২০০৩ সালে মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সরাসরি রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন মনোয়ার হোসেন। তবে তখন ইকবাল আখতার খান কাফুরের কাছে তিনি পরাজিত হন। পরবর্তীতে কর্মজীবনে মনোনিবেশ করে ইনসেপটা ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৫ সালের পেট্রোল বোমা হামলার মামলার আসামি হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান তিনি। সেখানে খাবার হোটেলের ব্যাবসা শুরু করেন। পরে ২০১৮ সালে তারেক রহমানের নির্দেশে দেশে ফিরে এসে কারাবন্দী অবস্থায় মাগুরা-১ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। কিন্তু বহুল আলোচিত ‘রাতের ভোট’-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান শিখরের কাছে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মাগুরা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও জনসমর্থন, সাংগঠনিক দক্ষতা ও আন্দোলনে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে আলী আহমেদ-এর পরেই আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন এই আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন খান।