ঢাকা ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কালিহাতীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী’র স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে পররাষ্ট্র  উপদেষ্টার শোক গাজীপুরে জামায়াতের কর্মী ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সাভার আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রার্থী আলহাজ্ব মাদবর উপর সন্ত্রাসী হামলা গাজীপুরে সাংবাদিকদের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময় গাজীপুরে কর্পোরেট কোম্পানি থেকে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষায় আলোচনা সভা সিরাজদিখানে প্রবাসী যুবককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা; ছিনিয়ে নিয়েছে টাকা- স্বর্ণালংকার গাজীপুরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১দফার প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত পঞ্চগড়ে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কর্তৃক শীত বস্ত্র বিতরণ আদমদীঘিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ

কবরখেকো মন্ত্রী’র কান্ডে তোলপাড়

সৈয়দ শফিকুর রহমান :
কবরখেকো মন্ত্রীর জঘণ্যকান্ডে তোলপাড় সারাদেশ। রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে শত বছরের পুরনো কবরস্থানকে প্লট বানিয়ে সেখানেই নৌপরিবহন মন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর বহুতল ভবন নির্মানের ঘটনায় সর্বত্রই বাদ-প্রতিবাদ ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেকেই বলেছেন, শেখ মুজিবের আদর্শের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অকারণেই ‘ধর্ম বিরোধী’ অবস্থান নেন এবং এ কারণে প্রায়ই আওয়ামীলীগ এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। চক্রটি আওয়ামীলীগকে সরাসরি ধর্ম বিরোধী অবস্থানে নিয়ে দাঁড় করান। কবরস্থানের ৮৪টি মৃতদেহের উপর ভবন নির্মাণের মাধ্যমে অভিন্ন অপকর্মটি করলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী।
দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ-কাহারোল (দিনাজপুর-১) আসনের এমপি খালেদ মাহমুদ চৌধুরী সারাদেশে খুব বেশি পরিচিতমুখ না হলেও তার বাবা আব্দুর রৌফ চৌধুরী ছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তিনি বাংলাদেশ কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। ‘নেতা বাবা’র সূত্রে পাওয়া বিশেষ সহানুভূতিতেই নৌকা প্রতীক জোটে খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর কপালে। আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সমর্থক হওয়ার মতো যোগ্যতা দক্ষতা ছাড়া আওয়ামীলীগের ব্যানার ব্যবহার করেই খালেদ মাহমুদ তর তর করে উঠে গেছেন মন্ত্রনালয়ের চেয়ার পর্যন্ত। প্রতিমন্ত্রীত্বের মুকুট পরিধান করার পরও তিনি ছিলেন সবার অগোচরে। কোনো কর্মকান্ডে তার অংশগ্রহণ নেই বলে প্রচার-প্রচারণার সুযোগও মেলেনি খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর। প্রত্যন্ত এলাকার এমপি হিসেবে নিজ আসনে আলাদা কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডও চালাতে পারেননি মন্ত্রী। গত কয়েক বছরের মধ্যে খালেদ মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে দুটি খবর ফলাও করে ছাপা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর একটি হলো-‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত’- অপর খবরটি হলো ‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী করোনামুক্ত।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী-এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে সুপার ফ্লপ হওয়া খালেদ মাহমুদ চৌধুরী কবরস্থান দখল করে তবু কিছুটা আলোচনায় আসতে পারলেন। উত্তরা মডেল টাউনে শত বছরের পুরনো রস্থানকে অবৈধভাবে প্লটে পরিনত করা এবং মওকা বুঝে তা নৌপরিবহন মন্ত্রীর নামে বরাদ্দ দেয়ার জাল জালিয়াতি নিয়ে এতদিন রাজউক কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। প্লটটি নিয়ে সব অপকর্ম সাধন করেও রাজউকের উত্তরাস্থ কার্যালয়ের ডিডি থেকে শুরু করে রাজউকের পরিচালক, সচিব, এমনকি এস্টেট বিভাগের সদস্য পর্যন্ত কোনোরকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু গতকাল ‘দৈনিক খবর বাংলাদেশ’ ফলাও রিপোর্টের মাধ্যমে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেয়ার পর তৎপর হয়ে উঠেছে রাজউক, দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে কর্মকর্তাদের। গতকাল দফায় দফায় রাজউক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তদন্তের নামে বারবার সাক্ষ্য, প্রমান সংগ্রহে ছুটোছুটি করছেন তারা। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অনুসন্ধান টিমের সদস্যরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে মর্মে খবর পাওয়া গেছে। সচিবালয়ের দপ্তরে দপ্তরে কাল ছিল এক আলোচনা-মন্ত্রী হয়ে কবর গিলে খাওয়া। শুধু সচিবালয় কেন্দ্রীক সহস্রাধিক কপি পত্রিকা সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও বিভিন্ন দপ্তরের পিওনসহ কর্মচারীদের দৈনিক খবর বাংলাদেশ পত্রিকা সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে আগের রাত থেকেই ‘কবরখেকো মন্ত্রী’কে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আর বিতর্কের ঝড় উঠে। দিনভর চলেছে বিক্ষুব্ধ মানুষজনের নানারকম তীর্যক মন্তব্য। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো মহল যাতে ধর্মিয় উন্মাদনা সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে গতকাল দুপুর থেকেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্যরা বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের বলা হয়েছে, কবর দখলের বিষয় নিয়ে বক্তব্য প্রদান, উস্কে দেয়ার যে কোনো পরিবেশ এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে ইমাম ও খতিবসহ মসজিদ কমিটির সদস্যদের বিশেষভাবে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

তোলপাড় সারাদেশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরা বিভিন্ন মতামত পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া তথ্যাদি হচ্ছে: এতদিন তো শুনেছি-হাট দখল, ঘাট দখল, মঞ্চ দখল, ক্ষমতা দখলের কথা। নির্বাচনকালে ভোট কেন্দ্র দখলের কথাও শোনা যায়। কিন্তু খোদ মন্ত্রী কর্তৃক শত বছরের পুরনো কবরস্থান দখল করে অট্টালিকা গড়ে তোলার কথা জানা গেল পত্রিকাটির প্রচ্ছদ রিপোর্টের সূত্রে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! মানুষের অপরাধ প্রবণতা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছালে ৮৪টি কবর জুড়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করতে পারে-তা কল্পনা করতেও গা শিউরে উঠে। মৃত মানুষের হাড় হাড্ডির সঙ্গে রড জোড়া দিয়ে দিয়ে লিংটন ঢালাই করলে বিল্ডিং বেশি মজবুত হয় কী না কে জানে? কী সর্বনাশ! কত জঘণ্য মানসিকতা!! কবরস্থান দখল করে নিজেদের সুখ সংসার রচনাকারী ননসেন্সদের উদ্দেশ্যেই প্রয়াত কবি সৈয়দ হক লিখেছিলেন : “ননসেন্স আর মোর হ্যাপী…তারা মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়েও প্রাণ খুলে হাঁসতে পারে…। ”
কবি সৈয়দ হকের উদ্বৃতি দিয়েই আরেকজন লিখেছেন, সেসব ননসেন্সরা তো এমপি, মন্ত্রী হয় না-কখনও তারা নেতা, পাতি নেতাও হতে পারে না। তারা বড়জোর নর্থবেঙ্গল ছেড়ে এসে দৈনিক ভিত্তিতে শ্রম বিক্রি করে ক্ষুধা নিবারণের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু এ জামানার ননসেন্স মহলটি গায়ে একবার মুজিবকোর্ট লাগাতে পারলেই হলো, আর তাকে পায় কে? ক্ষমতাসীন সরকারের খুটি হিসেবে পরিচিত এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্মের বেহালচিত্র ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও প্রতিবেদন আকারে দাখিল হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেবলমাত্র করোনা দুর্যোগ ভয়াল রুপ নেয় কি না সেটাই পর্যবেক্ষণ করছে শীর্ষ মহল। করোনার আঘাত না হলেই অপরাধী নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সহসাই ‘হাসিনা দুর্যোগের’ ভয়াবহতা টের পাবেন।
ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখা হয়, আমি মাঝে মধ্যেই নৌপরিবহণ মন্ত্রনালয় নিয়ে কিছু ভাবতে গেলেই অবাক হই। যে বা যারা এ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পান তারাই কয়লার বর্ণে কুলুষিত হয়ে যান। কেউ কেউ জন্মসূত্রে অপরাধী রুপেই মন্ত্রনালয়টিতে সওয়ার হন, আবার কেউবা মন্ত্রনালয়ে পা দিয়েই লুটেরা অপরাধীতে পরিনত হন। দৈনিক খবর বাংলাদেশ তার প্রথম পাতার পুরোটা জুড়ে কবর দখলের কাভারেজ দিয়ে দায়িত্ববান মন্ত্রীর জঘণ্যকান্ডের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এমন সাহসী সাংবাদিকতাকে স্যালুট জানাতে কারো কার্পণ্য করার কথা নয়। নীতি নৈতিকতা, আদর্শচ্যুতিসহ ধর্মবিরোধী ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েও মন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী আরো কতক্ষণ, কতদিন ‘পদটি কুলুষিত’ করার সুযোগ পান সেটাই এখন দেখার বিষয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

কালিহাতীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী’র স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল

কবরখেকো মন্ত্রী’র কান্ডে তোলপাড়

আপডেট টাইম : ১২:১১:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২০

সৈয়দ শফিকুর রহমান :
কবরখেকো মন্ত্রীর জঘণ্যকান্ডে তোলপাড় সারাদেশ। রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে শত বছরের পুরনো কবরস্থানকে প্লট বানিয়ে সেখানেই নৌপরিবহন মন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর বহুতল ভবন নির্মানের ঘটনায় সর্বত্রই বাদ-প্রতিবাদ ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেকেই বলেছেন, শেখ মুজিবের আদর্শের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অকারণেই ‘ধর্ম বিরোধী’ অবস্থান নেন এবং এ কারণে প্রায়ই আওয়ামীলীগ এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। চক্রটি আওয়ামীলীগকে সরাসরি ধর্ম বিরোধী অবস্থানে নিয়ে দাঁড় করান। কবরস্থানের ৮৪টি মৃতদেহের উপর ভবন নির্মাণের মাধ্যমে অভিন্ন অপকর্মটি করলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী।
দেশের সর্ব উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ-কাহারোল (দিনাজপুর-১) আসনের এমপি খালেদ মাহমুদ চৌধুরী সারাদেশে খুব বেশি পরিচিতমুখ না হলেও তার বাবা আব্দুর রৌফ চৌধুরী ছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ। তিনি বাংলাদেশ কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। ‘নেতা বাবা’র সূত্রে পাওয়া বিশেষ সহানুভূতিতেই নৌকা প্রতীক জোটে খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর কপালে। আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সমর্থক হওয়ার মতো যোগ্যতা দক্ষতা ছাড়া আওয়ামীলীগের ব্যানার ব্যবহার করেই খালেদ মাহমুদ তর তর করে উঠে গেছেন মন্ত্রনালয়ের চেয়ার পর্যন্ত। প্রতিমন্ত্রীত্বের মুকুট পরিধান করার পরও তিনি ছিলেন সবার অগোচরে। কোনো কর্মকান্ডে তার অংশগ্রহণ নেই বলে প্রচার-প্রচারণার সুযোগও মেলেনি খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর। প্রত্যন্ত এলাকার এমপি হিসেবে নিজ আসনে আলাদা কোনো উন্নয়ন কর্মকান্ডও চালাতে পারেননি মন্ত্রী। গত কয়েক বছরের মধ্যে খালেদ মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে দুটি খবর ফলাও করে ছাপা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর একটি হলো-‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত’- অপর খবরটি হলো ‘নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী করোনামুক্ত।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী-এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে সুপার ফ্লপ হওয়া খালেদ মাহমুদ চৌধুরী কবরস্থান দখল করে তবু কিছুটা আলোচনায় আসতে পারলেন। উত্তরা মডেল টাউনে শত বছরের পুরনো রস্থানকে অবৈধভাবে প্লটে পরিনত করা এবং মওকা বুঝে তা নৌপরিবহন মন্ত্রীর নামে বরাদ্দ দেয়ার জাল জালিয়াতি নিয়ে এতদিন রাজউক কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। প্লটটি নিয়ে সব অপকর্ম সাধন করেও রাজউকের উত্তরাস্থ কার্যালয়ের ডিডি থেকে শুরু করে রাজউকের পরিচালক, সচিব, এমনকি এস্টেট বিভাগের সদস্য পর্যন্ত কোনোরকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু গতকাল ‘দৈনিক খবর বাংলাদেশ’ ফলাও রিপোর্টের মাধ্যমে হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দেয়ার পর তৎপর হয়ে উঠেছে রাজউক, দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে কর্মকর্তাদের। গতকাল দফায় দফায় রাজউক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তদন্তের নামে বারবার সাক্ষ্য, প্রমান সংগ্রহে ছুটোছুটি করছেন তারা। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অনুসন্ধান টিমের সদস্যরাও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে মর্মে খবর পাওয়া গেছে। সচিবালয়ের দপ্তরে দপ্তরে কাল ছিল এক আলোচনা-মন্ত্রী হয়ে কবর গিলে খাওয়া। শুধু সচিবালয় কেন্দ্রীক সহস্রাধিক কপি পত্রিকা সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও বিভিন্ন দপ্তরের পিওনসহ কর্মচারীদের দৈনিক খবর বাংলাদেশ পত্রিকা সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে আগের রাত থেকেই ‘কবরখেকো মন্ত্রী’কে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আর বিতর্কের ঝড় উঠে। দিনভর চলেছে বিক্ষুব্ধ মানুষজনের নানারকম তীর্যক মন্তব্য। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো মহল যাতে ধর্মিয় উন্মাদনা সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে গতকাল দুপুর থেকেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্যরা বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের বলা হয়েছে, কবর দখলের বিষয় নিয়ে বক্তব্য প্রদান, উস্কে দেয়ার যে কোনো পরিবেশ এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে ইমাম ও খতিবসহ মসজিদ কমিটির সদস্যদের বিশেষভাবে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

তোলপাড় সারাদেশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরা বিভিন্ন মতামত পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া তথ্যাদি হচ্ছে: এতদিন তো শুনেছি-হাট দখল, ঘাট দখল, মঞ্চ দখল, ক্ষমতা দখলের কথা। নির্বাচনকালে ভোট কেন্দ্র দখলের কথাও শোনা যায়। কিন্তু খোদ মন্ত্রী কর্তৃক শত বছরের পুরনো কবরস্থান দখল করে অট্টালিকা গড়ে তোলার কথা জানা গেল পত্রিকাটির প্রচ্ছদ রিপোর্টের সূত্রে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! মানুষের অপরাধ প্রবণতা কোন্ পর্যায়ে পৌঁছালে ৮৪টি কবর জুড়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করতে পারে-তা কল্পনা করতেও গা শিউরে উঠে। মৃত মানুষের হাড় হাড্ডির সঙ্গে রড জোড়া দিয়ে দিয়ে লিংটন ঢালাই করলে বিল্ডিং বেশি মজবুত হয় কী না কে জানে? কী সর্বনাশ! কত জঘণ্য মানসিকতা!! কবরস্থান দখল করে নিজেদের সুখ সংসার রচনাকারী ননসেন্সদের উদ্দেশ্যেই প্রয়াত কবি সৈয়দ হক লিখেছিলেন : “ননসেন্স আর মোর হ্যাপী…তারা মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়েও প্রাণ খুলে হাঁসতে পারে…। ”
কবি সৈয়দ হকের উদ্বৃতি দিয়েই আরেকজন লিখেছেন, সেসব ননসেন্সরা তো এমপি, মন্ত্রী হয় না-কখনও তারা নেতা, পাতি নেতাও হতে পারে না। তারা বড়জোর নর্থবেঙ্গল ছেড়ে এসে দৈনিক ভিত্তিতে শ্রম বিক্রি করে ক্ষুধা নিবারণের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু এ জামানার ননসেন্স মহলটি গায়ে একবার মুজিবকোর্ট লাগাতে পারলেই হলো, আর তাকে পায় কে? ক্ষমতাসীন সরকারের খুটি হিসেবে পরিচিত এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্মের বেহালচিত্র ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও প্রতিবেদন আকারে দাখিল হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেবলমাত্র করোনা দুর্যোগ ভয়াল রুপ নেয় কি না সেটাই পর্যবেক্ষণ করছে শীর্ষ মহল। করোনার আঘাত না হলেই অপরাধী নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা সহসাই ‘হাসিনা দুর্যোগের’ ভয়াবহতা টের পাবেন।
ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখা হয়, আমি মাঝে মধ্যেই নৌপরিবহণ মন্ত্রনালয় নিয়ে কিছু ভাবতে গেলেই অবাক হই। যে বা যারা এ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পান তারাই কয়লার বর্ণে কুলুষিত হয়ে যান। কেউ কেউ জন্মসূত্রে অপরাধী রুপেই মন্ত্রনালয়টিতে সওয়ার হন, আবার কেউবা মন্ত্রনালয়ে পা দিয়েই লুটেরা অপরাধীতে পরিনত হন। দৈনিক খবর বাংলাদেশ তার প্রথম পাতার পুরোটা জুড়ে কবর দখলের কাভারেজ দিয়ে দায়িত্ববান মন্ত্রীর জঘণ্যকান্ডের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এমন সাহসী সাংবাদিকতাকে স্যালুট জানাতে কারো কার্পণ্য করার কথা নয়। নীতি নৈতিকতা, আদর্শচ্যুতিসহ ধর্মবিরোধী ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েও মন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী আরো কতক্ষণ, কতদিন ‘পদটি কুলুষিত’ করার সুযোগ পান সেটাই এখন দেখার বিষয়।