ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৭ লাখ টাকার বিনিময়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলী ছেড়ে দিলেন যুবদলের নেতা মহম্মদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি টুটুল সাধারণ সম্পাদক মাসুদ ত্রিশালে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতার মাদ্রাসা দখলের চেষ্টা, হামলায় আহত- ১৫ আসিয়ান সিটির দখল দারিত্বের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন গাজীপুরে মাস ব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা শুরু সিরাজদিখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন ৮ম শ্রেনী পাশ ভুয়া চিকিৎসক চাঁন মিয়া সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গাজীপুরে আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মানববন্ধন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গাজীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

শ্রীপুরে সড়ক ও জনপদ নাকি পৌরসভা, চাঁদা নাকি ট্যাক্স দ্বন্দ্ব ?

মো. মোজাহিদ, স্টাফ রিপোর্টার
সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে ইজারা অবৈধ, পৌর মেয়র বলছেন ইজারা বৈধ ও নিয়মতান্ত্রিক। কতটুকু পৌর আর কতটুকু সওজ, চাঁদা নাকি ট্যাক্স ? এ প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার করতে পারেননি কেউ!
সড়ক ও জনপদের জায়গা থেকে রিসিট বিহীন টাকা উত্তোলনের প্রতিবাদ করায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় হকার্স সমিতি’র সভাপতি মনির হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার [২৯ এপ্রিল ২০২১] রাত নয়টায় মাওনা চৌরাস্তা বাজার রোডের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রাতে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী মনির হোসেন (৪০)। তিনি শ্রীপুর পৌর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফু মিয়ার সন্তান।
ওই অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন, শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের মো. আবুলের সন্তান মোরসালিন মামুন (৩০), একই গ্রামের সুমন মিয়া (২৮) ও কড়ইতলা গ্রামের জলিলের সন্তান বোরহান উদ্দিনসহ (২২) আরও অচেনা ৭-৮জন।
রোববার (২ মে) ভুক্তভোগী মনির হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী ফুটপাতের প্রত্যেক দোকানি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে অভিযুক্তরা।
আমিসহ কয়েকজন চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে ব্যাপক মারধর করে তারা। ওই সময় আমাকে প্রয়োজনে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা।
রিসিট ছাড়া টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে মাওনা চৌরাস্তা ফুটপাতের ব্যবসায়ী হালিম ব্যাপারী, জসীম উদ্দিন, শুক্কর আলী ও এনামুলসহ আরও অনেকেই জানান, জননেতা ইকবাল হোসেন সবুজ ভাই এমপি হওয়ার পরে দীর্ঘদিন আমরা চাঁদা দেওয়া ছাড়া নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছি। এই করোনাকালে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবৎ প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। তারা বলছে, বাজার ইজারা নিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে কোনও রিসিট দেয়না। তবুও তাদের ভয়ে টাকা দিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।
মাওনা চৌরাস্তার ফুটপাত থেকে চাঁদা নেওয়া প্রসঙ্গে শ্রীপুর পৌর ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া জানান, ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ ভাইয়ের একজন কর্মী হিসেবে এরকম চাঁদাবাজি কখনোই সমর্থন করি না। মনিরকে মারধরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ আসিফ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনী প্রচারণার সময় মাওনা চৌরাস্তার একটি পথসভায় গাজীপুর-৩ আসনের মাননীয় সাংসদ মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন সবুজ বলেছিলেন, ফুটপাতসহ সিএনজি অটোরিকশায় কোন প্রকার চাঁদাবাজি হবে না, বিগত দুই বছর মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী বাজার পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা বন্ধ রেখেছিল, এ-বছর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ না করেই একঘেয়ামি করে পৌর কর্তৃপক্ষ বাজার ইজারা দিয়েছেন। মোরসালিন মামুনের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি হচ্ছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। আমি জানতে পারি এই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মোরসালীন মামুনের নেতৃত্বে মাওনা চৌরাস্তায় হকারদের সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি মনির হোসেনকে মারধর করে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে মারধরের বিচার কামনা করছি’।
শ্রীপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন জানান, ‘ফুটপাতে যারা ব্যবসা করে তারা সবাই দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। এই মহামারী করোনা কালে তাদের থেকে চাঁদা নেওয়ার অর্থ হলো তাদেরকে জুলুম করা। আমাদের নেতা গাজীপুর-৩ আসনের অভিভাবক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি হওয়ার আগে বলেছিলেন, শ্রীপুর হবে একটি আধুনিক ও মানবিক উপশহর। মানবিক উপশহরে কখনোই চাঁদাবাজি কাম্য নয়। যারা এসব করছে অবশ্যই এমপি মহোদয়ের মান ক্ষুন্ন করার জন্যই এসব করছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চাঁদাবাজি বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি’।
গাজীপুর জজকোর্টের অ্যাডভোকেট কামাল ফকির জানান, ‘সড়ক ও জনপদের জায়গায় পৌরসভা ইজারা দিতে পারে না। পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে থাকলে ইজারাদার অবশ্যই রিসিট দিয়ে ট্যাক্স নেবেন। রিসিট না দিয়ে যে টাকাটা নেওয়া হচ্ছে ওই টাকা কোন খাতে যাচ্ছে এটা যারা টাকা দিচ্ছে তারা নিজেরাই জানেন না। অতএব, এটা সুস্পষ্ট চাঁদাবাজি। আমি একজন পৌরসভার  বাসিন্দা হিসেবে এসব চাঁদাবাজির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে মনিরের উপর অতর্কিত হামলায় তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি’।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোরসালিন মামুন জানান, ‘আমি টেন্ডারের মাধ্যমে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি, কোনও চাঁদাবাজি করিনি। যে টাকাটা নেওয়া হচ্ছে সেটা ট্যাক্স। রিসিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারি সময়ে শুরুর দিকে দোকানপ্রতি ৫০ টাকা করে উঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পৌরসভা থেকে কোনও নীতিমালা এখনও না পাওয়ায় এবং লকডাউনের জন্য রিসিট বানানো হয়নি। অতি শীঘ্রই আমরা রিসিট ব্যবহারের মাধ্যমে ট্যাক্স আদায় করবো। পৌরসভা থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কতটুকু জায়গা থেকে টাকা নিচ্ছেন ? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের লিখিত কোনও সীমানা নেই। মাওনা সিনেমা হলের সামনে থেকে নোমান উইভিং পর্যন্ত আমরা ট্যাক্স নিচ্ছি। হকার্স সমিতির সভাপতি মনিরকে মারধরের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ওর সাথে আমার লোকজনের বাকবিতন্ডা হয়। পরে এক পর্যায়ে মনিরের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আমরাও অভিযোগ করেছি’।
শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিসুর রহমান জানান, ‘গত ১২ বছর যাবৎ মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী বাজারটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এবারও নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবারের মতো ইজারা দেওয়া হয়েছে’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, ‘মূল বিষয়টা হলো এক পক্ষ বলতেছে চাঁদা নেয়, আর মেয়র আমাকে বললো, তারা ইজারা নিয়ে ট্যাক্স উঠাচ্ছে। ট্যাক্সের কি রেট আছে আমরা দেখবো। মনির হোসেনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকে সোমবার ডাকা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
গাজীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের  নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন জানান, ‘মাওনা চৌরাস্তার দুই পাশের রোডে সড়ক ও জনপদের জায়গা। সওজের জায়গায় পৌরসভার জায়গা থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকটা সংস্থার নিজস্ব জায়গা থাকে। সওজের জায়গায় পৌরসভার ইজারা দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। তবে সওজের জায়গায় যে ফুটপাত বসে সেটাই অবৈধ। সরকারিভাবে ঘোষিত চাঁদা তোলার সুযোগ নেই অবৈধ জায়গায়। আমরা সওজের জায়গা কখনও ইজারা দিইনা, কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নিইনি। তবে কতটুকু পর্যন্ত সওজের জায়গা, অথবা সওজের পাশে পৌরসভার জায়গা আছে কি না ? কতটুকু দূরে আছে ? এসব প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার করতে পারেননি তিনি।

গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেন। আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ’।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

৭ লাখ টাকার বিনিময়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলী ছেড়ে দিলেন যুবদলের নেতা

শ্রীপুরে সড়ক ও জনপদ নাকি পৌরসভা, চাঁদা নাকি ট্যাক্স দ্বন্দ্ব ?

আপডেট টাইম : ০৯:০১:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মে ২০২১
মো. মোজাহিদ, স্টাফ রিপোর্টার
সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে ইজারা অবৈধ, পৌর মেয়র বলছেন ইজারা বৈধ ও নিয়মতান্ত্রিক। কতটুকু পৌর আর কতটুকু সওজ, চাঁদা নাকি ট্যাক্স ? এ প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার করতে পারেননি কেউ!
সড়ক ও জনপদের জায়গা থেকে রিসিট বিহীন টাকা উত্তোলনের প্রতিবাদ করায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় হকার্স সমিতি’র সভাপতি মনির হোসেনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার [২৯ এপ্রিল ২০২১] রাত নয়টায় মাওনা চৌরাস্তা বাজার রোডের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রাতে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী মনির হোসেন (৪০)। তিনি শ্রীপুর পৌর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফু মিয়ার সন্তান।
ওই অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন, শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের মো. আবুলের সন্তান মোরসালিন মামুন (৩০), একই গ্রামের সুমন মিয়া (২৮) ও কড়ইতলা গ্রামের জলিলের সন্তান বোরহান উদ্দিনসহ (২২) আরও অচেনা ৭-৮জন।
রোববার (২ মে) ভুক্তভোগী মনির হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী ফুটপাতের প্রত্যেক দোকানি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে অভিযুক্তরা।
আমিসহ কয়েকজন চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে ব্যাপক মারধর করে তারা। ওই সময় আমাকে প্রয়োজনে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা।
রিসিট ছাড়া টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে মাওনা চৌরাস্তা ফুটপাতের ব্যবসায়ী হালিম ব্যাপারী, জসীম উদ্দিন, শুক্কর আলী ও এনামুলসহ আরও অনেকেই জানান, জননেতা ইকবাল হোসেন সবুজ ভাই এমপি হওয়ার পরে দীর্ঘদিন আমরা চাঁদা দেওয়া ছাড়া নির্বিঘ্নে ব্যবসা করেছি। এই করোনাকালে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবৎ প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। তারা বলছে, বাজার ইজারা নিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে কোনও রিসিট দেয়না। তবুও তাদের ভয়ে টাকা দিয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।
মাওনা চৌরাস্তার ফুটপাত থেকে চাঁদা নেওয়া প্রসঙ্গে শ্রীপুর পৌর ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া জানান, ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ ভাইয়ের একজন কর্মী হিসেবে এরকম চাঁদাবাজি কখনোই সমর্থন করি না। মনিরকে মারধরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ আসিফ জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনী প্রচারণার সময় মাওনা চৌরাস্তার একটি পথসভায় গাজীপুর-৩ আসনের মাননীয় সাংসদ মুহাম্মাদ ইকবাল হোসেন সবুজ বলেছিলেন, ফুটপাতসহ সিএনজি অটোরিকশায় কোন প্রকার চাঁদাবাজি হবে না, বিগত দুই বছর মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী বাজার পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা বন্ধ রেখেছিল, এ-বছর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ না করেই একঘেয়ামি করে পৌর কর্তৃপক্ষ বাজার ইজারা দিয়েছেন। মোরসালিন মামুনের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি হচ্ছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। আমি জানতে পারি এই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় মোরসালীন মামুনের নেতৃত্বে মাওনা চৌরাস্তায় হকারদের সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি মনির হোসেনকে মারধর করে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে চাঁদাবাজি বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে মারধরের বিচার কামনা করছি’।
শ্রীপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন জানান, ‘ফুটপাতে যারা ব্যবসা করে তারা সবাই দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। এই মহামারী করোনা কালে তাদের থেকে চাঁদা নেওয়ার অর্থ হলো তাদেরকে জুলুম করা। আমাদের নেতা গাজীপুর-৩ আসনের অভিভাবক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি হওয়ার আগে বলেছিলেন, শ্রীপুর হবে একটি আধুনিক ও মানবিক উপশহর। মানবিক উপশহরে কখনোই চাঁদাবাজি কাম্য নয়। যারা এসব করছে অবশ্যই এমপি মহোদয়ের মান ক্ষুন্ন করার জন্যই এসব করছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপে চাঁদাবাজি বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি’।
গাজীপুর জজকোর্টের অ্যাডভোকেট কামাল ফকির জানান, ‘সড়ক ও জনপদের জায়গায় পৌরসভা ইজারা দিতে পারে না। পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে থাকলে ইজারাদার অবশ্যই রিসিট দিয়ে ট্যাক্স নেবেন। রিসিট না দিয়ে যে টাকাটা নেওয়া হচ্ছে ওই টাকা কোন খাতে যাচ্ছে এটা যারা টাকা দিচ্ছে তারা নিজেরাই জানেন না। অতএব, এটা সুস্পষ্ট চাঁদাবাজি। আমি একজন পৌরসভার  বাসিন্দা হিসেবে এসব চাঁদাবাজির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে মনিরের উপর অতর্কিত হামলায় তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি’।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোরসালিন মামুন জানান, ‘আমি টেন্ডারের মাধ্যমে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি, কোনও চাঁদাবাজি করিনি। যে টাকাটা নেওয়া হচ্ছে সেটা ট্যাক্স। রিসিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারি সময়ে শুরুর দিকে দোকানপ্রতি ৫০ টাকা করে উঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পৌরসভা থেকে কোনও নীতিমালা এখনও না পাওয়ায় এবং লকডাউনের জন্য রিসিট বানানো হয়নি। অতি শীঘ্রই আমরা রিসিট ব্যবহারের মাধ্যমে ট্যাক্স আদায় করবো। পৌরসভা থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কতটুকু জায়গা থেকে টাকা নিচ্ছেন ? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের লিখিত কোনও সীমানা নেই। মাওনা সিনেমা হলের সামনে থেকে নোমান উইভিং পর্যন্ত আমরা ট্যাক্স নিচ্ছি। হকার্স সমিতির সভাপতি মনিরকে মারধরের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ওর সাথে আমার লোকজনের বাকবিতন্ডা হয়। পরে এক পর্যায়ে মনিরের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আমরাও অভিযোগ করেছি’।
শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিসুর রহমান জানান, ‘গত ১২ বছর যাবৎ মাওনা চৌরাস্তার অস্থায়ী বাজারটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এবারও নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবারের মতো ইজারা দেওয়া হয়েছে’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, ‘মূল বিষয়টা হলো এক পক্ষ বলতেছে চাঁদা নেয়, আর মেয়র আমাকে বললো, তারা ইজারা নিয়ে ট্যাক্স উঠাচ্ছে। ট্যাক্সের কি রেট আছে আমরা দেখবো। মনির হোসেনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকে সোমবার ডাকা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
গাজীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের  নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন জানান, ‘মাওনা চৌরাস্তার দুই পাশের রোডে সড়ক ও জনপদের জায়গা। সওজের জায়গায় পৌরসভার জায়গা থাকবেনা এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকটা সংস্থার নিজস্ব জায়গা থাকে। সওজের জায়গায় পৌরসভার ইজারা দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। তবে সওজের জায়গায় যে ফুটপাত বসে সেটাই অবৈধ। সরকারিভাবে ঘোষিত চাঁদা তোলার সুযোগ নেই অবৈধ জায়গায়। আমরা সওজের জায়গা কখনও ইজারা দিইনা, কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নিইনি। তবে কতটুকু পর্যন্ত সওজের জায়গা, অথবা সওজের পাশে পৌরসভার জায়গা আছে কি না ? কতটুকু দূরে আছে ? এসব প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার করতে পারেননি তিনি।

গাজীপুর-৩ আসনের এমপি ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলেন। আমাকে জানানোর জন্য ধন্যবাদ’।