স্টাফ রিপোর্টার :
বাবা ও সৎ মায়ের নির্যাতনেই অতিষ্ঠ স্কুল ছাত্রী রুয়াইদা নওশীন (১৯)। বাবার মানসিক নির্যাতনে মাতা জাহেদা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং তার নানা বাড়ী থেকে ওই নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে বাবার সাথে রুয়াইদা নওশীনের মায়ের বিচ্ছেদ হয়, বিচ্ছেদ হওয়ার পর ২০০৫ সালে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি মেয়ে সন্তান ও দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এই ঘটনার পরই রুয়াইদা নওশীন তার মা জাহেদা বেগমের নিকট ছিলেন তখন বয়স ছিলো ৭ বছর এবং বাবা মাঝে মাঝে মেয়ের খোঁজ খবর নিতেন। ২০১০ সালে বাবা তার মায়ের নিকট থেকে জোর করে রুয়াইদা নওশীনকে নিয়ে যায় তখন তার বয়স ৮ বছর, এতে তার মা অনেক কষ্ট পায় এবং হতাশায় দেশে ছেড়ে চলে যায়। বাবার কাছে যাওয়ার পর থেকে সৎ মা তাকে মেনে নিতে পারেনি। সৎ মা তাকে দিয়ে দিনের পর দিন বাসার সব কাজকর্ম করাতেন আর সৎ মায়ের উসকানিতে রুয়াইদা নওশীন ওপর বাবার অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন আরো বাড়তে থাকে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী মিরপুর পল্লবীতে। রুয়াইদা নওশীন পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের মেয়ে। রুয়াইদা নওশীন হাতীমারা হাই স্কুলের ছাত্রী। বাবার বাসায় আসার পর থেকে রুয়াইদা নওশীনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি, নির্মম অত্যাচার ও অবহেলা। সৎ মা তাকে দিয়ে বাসার সমস্ত কাজ করান আর খাবার নিয়ে, শারীরিক ভাবে, মানসিক নির্যাতন করতেন। সৎ মায়ের পরকিয়া রুয়াইদা নওশীনের জানার কারণে তার উপর অত্যাচার হতো বলে জানা যায়। বাবা নাসির উদ্দিন যখন অফিসের কাজে বাহিরে যেতেন তখন বাসার মধ্যে বাহিরে থেকে অপরিচিত অনেক লোকজনের আনাগোনা চলে। এই সব ঘটনা বাবাকে জানালে বাবা বিশ্বাস না করে বাবা ও সৎ মা মিলে রুয়াইদা নওশীনকে উল্টো আরও মারধর করতেন। মারধরের ফলে তার এক হাত ভেঙ্গে যায়, প্রতিবেশীরা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। আর ওই অত্যাচারের বিষয় রুয়াইদা নওশীন প্রতিবেশিদের মাধ্যমে তার মা জাহেদা বেগমকে জানাতেন। এমনকি সৎ মায়ের ভাই বোরহান তাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করে বলে জানা যায়। ওই সব ঘটনা খুলে বলার পরও বাবা ও সৎ মা বিশ্বাস করেনি।
এরপর রুয়াইদা নওশীন তার স্কুলের এক শিক্ষিকা মুনমুনকে বিষয়টি খুলে বললে তখন ওই শিক্ষিকা পল্লবী থানা নিয়ে একটি সাধরণ ডায়রী করান। পল্লবী থানার ডায়রীর বিষয় জানতে পারলে বাবা ও সৎ মা মিলে স্কুল শিক্ষিকা মুনমুন ম্যাডামকে প্রাণ্যাশের হুমকী প্রদান করেন ও ডায়রী তুলে নিতে বলেন। এতো নির্যাতন করে যখন সৎ মা কোন ফল পেলো না তখন সৎ মা খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালে এর কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়িলে প্রতিবেশিরা তার মামা আতিককে ফোন করিলে তার মামা এসে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ৪ দিন পর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে মামার সাথে মামার বাসায় চলে যায়। মামার বাসায় গিয়ে মাকে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বললে মা জাহেদা বেগম রুয়াইদা নওশীনকে মামলা করার পরামর্শ দেন। মামার সাথে পল্লবী থানায় গেলে পুলিশ তার বাবার বরিুদ্ধে মামলা নিতে অপারগ প্রকাশ করেন, কারণ তার বাবা নাসির উদ্দিন আওয়ামীলীগের অনেক এমপি ও মন্ত্রীদের সাথে উঠাবসা করেন। তখন মামাকে নিয়ে কোর্টে গিয়ে মামলা করেন এবং বাবা নাসির উদ্দিন, মামলা তুলে নেয়ার জন্য অনেকবার প্রাণন্যাশের হুমকী প্রদান করেন। বর্তমানে বাবা ও সৎ মায়ের ভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্কুল ছাত্রী রুয়াইদা নওশীন।