আশরাফুল ইসলাম (মহম্মদপুর) প্রতিনিধি :
মাগুরার মহম্মদপুরের সেটেলমেন্ট অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এ অফিসে ছাপা খতিয়ান বিতরণ, মাঠ জরিপ ও আপত্তি শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সব কাজে সাধারণ মানুষেকে দিতে হয় ঘুষ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই ওই অফিসে হয় না। বিভিন্ন কাজের জন্য প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন অফিস সহায়ক মো. তুরকানুজ্জামান নামের একজন। ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, মহম্মদপুর সেটেলমেন্ট অফিসে উপজেলার বিভিন্ন মৌজার ছাপা খতিয়ান বিতরণের পাশাপাশি বনগ্রাম মৌজার মাঠ জরিপের কাজ চলছে। এসব কার্যক্রমে ওই অফিসে খোলামেলাভাবেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। অফিসের ঝাড়ুদার, পিয়ন, পেশকার, সার্ভেয়ার, অফিস সহায়কসহ গঠিত চক্রের মাধ্যমে আদায় করছে মোটা অংকের ঘুষের টাকা। সরেজমিন সেটেলমেন্ট অফিস ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা কলেজ রোড এলাকার একটি ভবনের ৩য় তলায় সেলেটমেন্ট অফিস অবস্থিত। অফিসের অফিস সহায়ক তুরকানুজ্জামান চেয়ার-টেবিলে বসে বনগ্রামে মৌজার মাঠ জরিপের কার্যক্রম করছেন। তিনি খতিয়ান খুলতে প্রকাশ্যে নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। এছাড়া পর্চা দিতে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা, দিতে না চাইলে ভুক্তভোগীদের পোহাতে হয় নানা লাঞ্ছনা।
নামপ্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, বনগ্রাম মৌজার মাঠ জরিপের কাজ চলমান রয়েছে। খতিয়ান খুলতে সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা। কাগজপত্র নেই যেসব জমিতে অথবা ৩০-৪০ বছর আগে জমির মালিক ছিলেন, বিক্রির কারণে মালিক পরিবর্তন অথবা বর্তমানে মালিক নেই যেসব জমির খতিয়ান খুলতে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও নিচ্ছেন।
জমির কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও মাঠ জরিপ শেষে প্রতিপক্ষরা হয়রানিমূলকভাবে আপত্তি তুলেছেন। সেসব জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষের টাকা আদায় করছেন অফিস সহায়ক মো. তুরকানুজ্জামান। পর্চার নকল দেওয়ার নামে আদায় করছেন অতিরিক্ত নগদ টাকা। ওই অফিসে নগদ অর্থ গ্রহণের চিত্র দেখে মনে হয়, এ যেন কোনো সরকারি অফিস নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য। অফিস সহায়ক তুরকানুজ্জামান প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে ভিডিওটি তাকে দেখালে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মহম্মদপুর অফিসের এসও নজরুল ইসলাম জানান, আমি গত সপ্তাহে ঢাকায় প্রশিক্ষণে এসেছি। অফিস সহায়ক তুরকানুজ্জামান অফিস বসে প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন বিষয়টি এখনো জানি না। এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করব। মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর জোনাল কর্মকর্তা জেএসও মো. কামরুল আরিফ বলেন, মহম্মদপুর অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই কাম্য নয়। মহম্মদপুর অফিসে অবৈধ ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভিডিওতে ক্লিক করুন