স্টাফ রিপোর্টার
বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএর শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন-সিবিএর সভাপতি মো. আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং- ১৫১৬/২০২১। ধারা ৫০০/৫০৬ দঃ বিঃ আইন। মামলাটি করেন চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার বড়লক্ষীপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র মো. ওসমান গনি। ওসমান গনি বিআইডব্লিউটিএ ফ্লোটিং ওয়ার্কস ইউনিয়নের সভাপতি ও বিআইডব্লিউটিএর ভারপ্রাপ্ত কোয়ার্টার মাস্টার। যার রেজিঃ বি-১২৩০ (জাতীয় শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত) ১৪১-১৪৩।
আরো জানাগেছে, ২০১৭ সালে উক্ত সংগঠনের উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয় আবুল হোসেনকে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার স্মারক নং- ১৮০১৬.০২৭.০০.০০.০০২.২০১০-১২৩৩ মোতাবেক ঢাকার বাইরে বদলীসহ ৫টি শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। এছাড়াও সিবিএ নেতা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অঢেল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ উঠে। নিয়োগ, বদলি বাণিজ্যসহ নানা ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। আবুল হোসেন রাজধানীর সবুজবাগ থানার কাঠেরপুল এলাকার মৃত শিরু মিয়ার পুত্র।
এই মামলা করায় সিবিএ নেতা আবুল হোসেনের নির্দেশে সিবিএ নেতা রফিকুল ইসলাম ও তার বাহিনী মামলা বাদী ওসমান গনিকে মারধর করে গুরুতর আহত করে সকাল ৯টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ অফিসের ভিতরে এ ঘটনা ঘটে। ওসমান গনি সাংবাদিকদেক কাছে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ আমি মামলা দায়ের করেছি। এজন্য আবুল হোসেন আমার ওপর রেগে গিয়ে সিবিএ নেতা রফিকুল ইসলাম ও তার বাহিনী দিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। এ সময় ওই মামলার ১নং সাক্ষী মো. সুমনকেও ওরা মারধর করেছে। সুমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ওই সময় হামলাকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আমার সাথে থাকা মামলার কাগজপত্র ও দুটি মোবাইল ফোনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও জিনিসও ছিনিয়ে নেয়।
তখন মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিএর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন-সিবিএর সভাপতি মো. আবুল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন যাবত অসুস্থ। এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
মামলার অভিযোগ মতে, আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ রেজিঃ নং- বি- ২১৭৬ এর বহিষ্কৃত সভাপতি। তিনি বিআইডব্লিউটিএর হিসাব শাখায় অফিস সহকারী কাম কোষাধ্যক্ষ পদে কর্মরত আছেন। ট্রেড ইউনিনের নিয়ম অনুযায়ী কোষাধ্যক্ষ পদে কর্মরত থেকে কোন কর্মচারী ট্রেড ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে পারেন না। তারপরও তিনি উক্ত নিয়ম ভঙ্গ করে বিধি বহির্ভূতভাবে অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ করে এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অর্থ প্রতিপত্তির জোরে সিবিএ ট্রেড রাজনীতিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। সভাপতির পদ ধরে রেখে বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারীদের ওপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হওয়ার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তার অপরাধ ও দুর্নীতির বিষয়ে ১৫টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যবস্থা নেন না চেয়ারম্যান: কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ
আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ রেজিঃ নং- বি- ২১৭৬ এর বহিষ্কৃত সভাপতি হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেন না বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। বরং তিনিও আবুল হোসেনকে ছায়া মায়া দিয়ে লালন পালন করছেন। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানাগেছে, বিআইডব্লিউটিএতে যতো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয় তা যাতে বাইরে বা মিডিয়ায় প্রকাশ না হয় সেজন্য সিবিএ নেতা আবুল হোসেনের অবৈধ দাবী মিটিয়ে তাকে ঠান্ডা করে রাখা হয়। অন্য দিকে আবুল হোসেন যে কর্মচারীকেই বদলী করতে বলেন তাকেই সাথে সাথে বদলী করে দেওয়া হয়। এই চর্চা চলে আসছে প্রায় ২ বছর ধরে। যে কারণে আবুল হোসেন নিজেকে বিআইডব্লিউটিএর ‘রাজার রাজা’ মনে করেন। এ বিষয়ে অধিকাংশ কর্মচারী চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন। তারা এই সিবিএ দুর্বৃত্তের কালোথাবা থেকে মুক্তি চান। এ জন্য তারা প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা,নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও নৌ সচিবের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
আবুল হোসেনের বক্তব্য:
এ বিষয়ে মুঠোফোনে সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। দুদক তদন্ত করে কিছুই পায়নি। এমন কি বিভাগীয় তদন্তেও আমি নির্দোশ প্রমাণিত হয়েছি। আমি শ্রমিক কর্মচারিদের কল্যাণে কাজ করি। আমার একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ আছে তারাই এসব বদনাম রটাচ্ছে।