ফরিদপুর এর আলফাডাঙ্গায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪টি প্রকল্পের ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন ইয়াছমিন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পান্ডের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের আরও দুটি প্রকল্পের দেড় লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ।
অনুসন্ধান রিপোর্টে গত ২ বছর অর্থবছরের কয়েকটি অনুমোদিত তালিকা যাচাই করতেই এমন আত্মসাৎের অভিযোগ মেলে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
গোপনসূত্রে খোজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রায়ত মুনজুর হোসেনের অফিসিয়াল প্যাডে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের টিআর এর বিশেষ বরাদ্দের মুজিব শতবর্ষ পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনের ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা পরিষদের মধ্যে সৌন্দর্য বর্ধনের ২ লক্ষ টাকা মুজিব শতবর্ষ পার্কের জন্য রাইড ক্রয় এর আড়াই লক্ষ টাকা এবং উপজেলা পরিষদের ভিতরে আগেই স্থাপ্তিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সৌন্দর্য বর্ধন বাবদ ২ লক্ষ টাকা গত ২০২৩ সালের জানুয়ারির ৩০ তারিখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রকল্পগুলি অনুমোদন করেন। বিধিমোতাবেক পরবর্তীতে উক্ত প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও নামমাত্র জনপ্রতিনিধিদের নাম ব্যবহার করে কথিত একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পান্ডে এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক। কোন কাজ না করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাউকে না জানিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করে নিজেদের কাছে রেখে দেন তারা। অনুমোদিত প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন করে দেখা যায় কোন প্রকার কাজ সম্পাদন হয় নাই।
এই প্রসঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির একজন সভাপতি আবুল বাশার শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই প্রকল্প সম্বন্ধে কিছুই জানিনা৷ কোথায় কি কাজ করেছে কে সভাপতি তাও আমি জানিনা, আমি কোন টাকা উত্তোলন করি নাই।”
অপর দুটি প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল ওহাব পান্নু বলেন, ২ টি কাজের পিআইসি আমাকে করা হয়েছিলো বলে আমি জানতে পারি, কিন্তু আমি কোন টাকা উত্তোলন করিনাই পরবর্তীতে পিআইও এবং ইউএনও মহোদয় আমাকে একটি সাক্ষর দিতে বললে তারা আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তা হওয়ায় আমি তাদের কথায় একটি সাক্ষর করি। বিষয়টা নিয়ে সাবেক ইউএনও রফিকুল স্যারের সাথে কথা বললে তিনি আমাকে জানান ওই প্রকল্পের সমস্ত টাকা বর্তমান ইউএনও শারমিন ইয়াসমিনের কাছে।
ঘটনার সত্যতা জানতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পান্ডের অফিসে গেলে তিনি অফিসিয়ালী বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে তিনি আন অফিসিয়ালী নিজের এবং ইউএনওর দ্বায় স্বীকার করে বলেন, আমি এবং আগের ইউএনও টাকা উত্তোলন করেছি, নগদ টাকা বর্তমান ইউএনও শারমিন ইয়াছমিনের পকেটে আছে।
পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একাধিকবার প্রতিবেদককে ফোন করে উপাজেলা সংলগ্ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে নিয়ে সংবাদ প্রচার না করতে বিশেষ অনুরোধ করে টাকার অফার করেন।
তৎকালীন ইউএনও রফিকুল হককে এ বিষয়ে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের ৯ লক্ষ প্লাস টাকা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রাহাত ইসলামকে সামনে রেখে তৎকালীন এসিল্যান্ড রজত বিশ্বাস এর কাছে বুঝিয়ে দিয়ে আসি পরবর্তী ইউএনওকে বুঝিয়ে দেবার জন্য। এখনও ওই টাকা বর্তমান ইউএনও শারমিন ইয়াসমিন এর নিকট রয়েছে সে আমাকে ফোন করেছিলো, যে ভাই আমার বদলি হয়েছে আপনার রেখে যাওয়া টাকার কাজ করে দিবো।
এবিষয়ে প্রকৌশলী রাহাত ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং টাকাগুলি বর্তমান ইউএনও শারমিন ইয়াসমিন এর কাছে আছে বলে জানান
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রফিকুল হক বদলি হয়ে গেলে ,নির্বাচনকালীন সময়ে জ্যোতিশ্বর পাল নামে একজন ইউএনও যোগদান করেন। নির্বাচন শেষ হবার পরে তিনি বদলি হলে তার স্থলে ২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী যোগদান করেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৪ ব্যাচের শারমিন ইয়াসমিন নামের এই কর্মকর্তা। তিনি কোন কাজ না করেই বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন। গত ১৩ নভেম্বর তার বদলি আদেশ হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে। আরও জানা যায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আরও দুটি প্রকল্পে হারুন অর রশিদ নামের সাবেক এক পৌর কাউন্সিলরকে প্রকল্পের সভাপতি করে দেড় লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিজের পকেটে রেখে দেন এই ইউএনও। সরজমিনে যার বাস্তবে কাজের কোন প্রমাণ মেলেনি।
এই প্রকল্পের টাকা সম্পর্কে ইউএনও শারমিন ইয়াসমিনের কার্যালয়ে গেলে তিনি এবিষয়ে অডিও ভিডিও কোন প্রকার বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি টাকাগুলো তার কাছে আছে বলে স্বীকার করেন এবং বলেন, আপনারা সাংবাদিকবৃন্দ আমাকে সহযোগিতা করেন আমি দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।
প্রসঙ্গত গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন টি আর, কাবিখা, কাবিটার বাস্তবায়ন বিধিমালা অনুযায়ী পিআইসি কমিটি প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করে কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইসি কমিটিকে কারিগরি সহায়তা ও তদারকি করবেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা যৌথ সাক্ষরে প্রকল্পের কাজটি সমাপ্তি সাপেক্ষে কাজের বিল প্রদান করার কথা থাকলেও তারা নিজেরায় গত ২ অর্থ বছর আগের প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন।