রেজাউল করিম, গাজীপুর থেকে-
প্রেম করে প্রেমিক-প্রেমিকা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ছেলের বাবাকে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়েছে মেয়ের বাবা ও তার সহযোগীরা। বেদড়ক পেটানোর পর ৪টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার পর ৯৯৯ এর সহযোগিতা পুলিশ উদ্ধার করে ছেলের বাবাকে। ঘটনাটি গাজীপুর সদর থানাধীন লক্ষীপুরা এলাকার।
গতকাল বুধবার নগরীর একটি স্থানীয় পত্রিকা অফিসে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী ছেলের বাবা মো: এন্তাজ আলী। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানাধীন কয়ড়া এলাকার বাসিন্দা এন্তাজ গাজীপুরের লক্ষীপুরা এলাকার রোকনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি লক্ষীপুরা তিন সড়কের লাল মিয়া মার্কেটে কসমেটিক্সের ব্যবসা করেন।
লিখিত বক্তব্যে এন্তাজ আলী বলেন, আমার বর্তমান ঠিকানা ভাড়া বাসা সংলগ্ন প্রতিবেশী আবুল কাসেমের (৪০) এর মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস কনার (১৮) এর সাথে আমার ছেলে মো. নাজমুল (২১) এর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এটা আমি শুনেছি। পরে আমার ছেলেকে আমি আবুল কাসেমের মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করি। গত ১৬ নভেম্বরের পর থেকে আমার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। তখন এলাকাবাসী অনেকের মুখে শুনতে পাই আমার ছেলে নাজমুল ও কাসেমের মেয়ে কনা অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছে। তাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে আবুল কাশেম ও তার সহযোগি মোঃ হাসেম, বেলায়েত যোগসাজস করে আমাকে দোষারপ করে এবং কাসেমের মেয়েকে খুঁজে দেয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে।
গত ২১ নভেম্বর বিকেলে আবুল কাশেম আমার ভাড়া বাসায় এসে আমাকে তার যেতে বলে। আমার ভাড়া বাসা হতে বের হওয়া মাত্রই আগে থেকে উৎপেতে থাকা হাসেম ও বেলায়েত আমাকে রশি দিয়া বেঁধে ফেলে। এরপর আবুল কাশেম, হাসেম ও বেলায়েত আমাকে রাস্তায় ফেলে কুকুরের মতো জনসম্মুখে বেদড়ক মারপিট করতে থাকে। আমাকে বাঁচাতে আমার ছোট মেয়ে মিম (১৬) এগিয়ে আসলে আবুল কাশেম তার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আবুল কাশেম ও বেলায়েত ফিল্মি স্টাইলে রশি দিয়ে আমার দুই হাত এবং গামছা দিয়ে আমার দুই চোখ বেঁধে অটোরিক্সায় তুলে নিয়ে ধান গবেষণাস্থ কবরস্থান সংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে আমার মাথা, বুক, পিঠ, কোমড়, দুই উরুসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম করে। এক পর্যায়ে আবুল কাশেমের হুকুমে হাসেম ও বেলায়েত ধারালো চাকু বের করে আমার গলায় ধরে আমাকে সহ পরবর্তীতে আমার স্ত্রী-সন্তানকে জানে মারিয়া ফেলার ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়া তাহাদের আনিত ৪টি সাদা কাগজে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে আমার বড় ছেলে মো: মাহাবুব (২২) আমার জীবন রক্ষায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে সাহায্য চাইলে গাজীপুর সদর (জিএমপি) থানা পুলিশের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করি। আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আবুল কাশেম হাসপাতালে গিয়ে মারপিটের বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিষেধ করে এবং বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। এরপর গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আবুল কাশেম গংদের ভয়ে জীবন রক্ষার্থে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে জয়দেবপুর থানাধীন তালতলী এলাকার মোগড় আলীর বাড়ীর একটি রুম ভাড়া নিয়া আশ্রয় গ্রহণ করি। এতেও আবুল কাশেম ক্ষান্ত না হয়ে জয়দেবপুর থানাধীন তালতলী এলাকায় এসে পুনরায় প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে এবং লক্ষীপুরা এলাকার আমার ভাড়া বাসাসহ দোকানে তালাবদ্ধ করে রাখে।
এ ঘটনায় আমার স্ত্রী মোছা: মাফিয়া (৪২) বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমি ও আমার পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। যেহেতু ছেলে-মেয়ের বিয়ের বিষয় সেজন্য আমরা এটাকে সেভাবেই অবজারবেশন করছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিরোনাম :
গাজীপুরে ছেলের বাবাকে হাত-পা বেঁধে পেটালেন মেয়ের বাবা
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০৩:২৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- ৭৯৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ