নিজস্ব প্রতিবেদক-
বগুড়ার আদমদীঘিতে গত তিনমাসে ছিনতাই, মোটরসাইকেল, গরু, সেচপাম্প, মোবাইল, বৈদ্যুতিক মিটারসহ বেশ কয়েকটি চুরি সংগঠিত হয়েছে। এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা পচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। এতে দিনদিন বাড়ছে অপরাধের প্রবণতা। যারফলে রাত হলেই আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে।
জানা যায়, ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করে আদমদীঘি থানা পুলিশ। থানার দায়িত্বরত অফিসারের সঠিক নির্দেশিকা না থাকায় হঠাৎ করে গত তিন মাসে বিভিন্ন অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। ছিনতাই, গরু, মোটরসাইকেল, সেচপাম্প, বসতবাড়ি থেকে মোবাইল ফোন, বৈদ্যুতিক মিটারসহ বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটছে। এতেকরে ঝিমিয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ। গত ৬ মে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার নশরৎপুর ইরামতি ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় গোলাম রব্বানী ও বুকুল হোসেনকে পথরোধ করে দুটি মোটরসাইকেল ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, নশরতপুর ব্রীজ পার হয়ে নিমকুড়ি রাস্তায় পৌঁছাতে মুখোশধারী কয়েকজন দলবদ্ধভাবে ছিনতাইকারী তাদের পথরোধ করে হাতপা ও মুখ বেঁধে মারধর করে এবং তাদের পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ও নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে চলে যান। পরে গ্রামবাসী এসে আমাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত ২০ এপ্রিল রবিবার রাতে অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাষ্টার রেজাউল করিম ডালিমের উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতাল চত্বরে নিজ বাসার সামনে থেকে তার মোটরসাইকেল কেবা কাহারা চুরির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পরে আদমদীঘি থানা পুলিশে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। ঘটনাটির অভিযোগ দায়েরই সীমাবদ্ধ। কয়েকমাস আগে সান্তাহারে বাড়ির মেইল গেটের তালা ভেঙে আবু হাসান নামের এক পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল চুরি হয়। যার তদন্ত আজও থেমে আছে৷ এরপর গত ২ মার্চ রবিবার গভীর রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কদমা-করজবাড়ি গ্রামের আবু সাঈদ নামের এক কৃষকের খামার থেকে চারটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী জানায়, সেহেরী খাওয়ার জন্য খামারে থাকা লোকজন বাড়িতে আসলে এই সুযোগে ওই খামার থেকে কেবা কাহারা গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যান। তার দাবী এ ঘটনায় প্রায় চার লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পুলিশে বিষয়টি অবগত করা হলেও এখনো পর্যন্ত চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী। ইতিপূর্বে কয়েকটি এলাকায় এমন গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। গত ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলা সদর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের কৃষক মাসুদ মন্ডলের ফসলি মাঠ থেকে সাতটি জ্বালানি চালিত শ্যালো মেশিনের পাম্প চুরির ঘটনা ঘটে। চোরচক্র ওই পাম্প চুরি করে সেখানে একটি চিরকুটে মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। তাদের কাছ পাম্প প্রতি ৩ হাজার টাকা করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করেন। ওই টাকা দিলে পাম্প ফেরত দেয়া হবে বলে জানান ভুক্তভোগী। এদিকে উপজেলার চাঁপাপুর ইউপির কয়েকটি বৈদ্যুতিক মিটার চুরির অভিযোগ আসে। এবং চুরি যাওয়ার পর সেখানে চিরকুটে মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। ইতিপূর্বে বিহিগ্রাম এলাকায় মাসের মধ্যে দুইটি খড়ের গাদায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতেকরে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই কৃষকরা। সম্প্রতি গত শুক্রবার রাতেও নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কে ডেকোরেটারসহ দুটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বসতবাড়ি থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ দিতে গেলে চুরির অভিযোগ না নিয়ে মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়েরি করতে বলেন দায়িত্বরত অফিসার। গত কয়েকমাসে এমন একাধিক অভিযোগ থানায় আসে। ফলে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের অভাবে অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে তাদের এমন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান খবর বাংলাদেশকে বলেন, আমি আসার পর থেকে মনে করি আদমদীঘির চারপাশে যে থানাগুলো আছে তার মধ্যে আমার থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। চুরির ঘটনা সব জায়গাতেই আছে। তারপরেও সাধ্য অনুযায়ী আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি দু একটা ঘটনা না ঘটে তবে তো পুলিশের প্রয়োজন নাই তাছাড়া আপনারা নিউজ করবেন কি করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমিসহ আমার অফিসাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।