সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ডিলারের নামে সার উত্তোলন দেখিয়ে খোলা বাজারে অবৈধভাবে সার বিক্রির অভিযোগে মাগুরা বিএডিসির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা সদর উপজেলার বিএডিসি সারগোডাউন থেকে প্রায় ৪০ বস্তা সার বিভিন্ন নসিমন ও নাটা অটোযোগে বাইরে পাচারের সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকরা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এসময় এক বস্তা সার রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন জানান, আজ সকালে এক সিন্ডিকেট ডিলারের নামে সার উঠিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করছিল। খবর পেয়ে আমরা বাধা দিলে তারা দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।” ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা এক বস্তা সার পরে গেটম্যান শাহিনের কক্ষের পাশে উদ্ধার হয়।
গোডাউন উপসহকারী পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, সারগুলো ডিলারের কাছ থেকে ক্রয়কৃত। কিন্তু তিনি কোন প্রকার ক্যাশ মেমো, বিল-ভাউচার বা ডিলারের প্রত্যয়নপত্র দেখাতে পারেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে তিনি আর কোনো উত্তর দিতে চাননি। বরং সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ফোন ধরিয়ে দেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার অভিযোগ করেছেন, চলতি মৌসুমে তারা সরকারি চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না। বরং অফিস সহকারীর হাতে ঘুষ না দিলে সার তোলা সম্ভব হয় না। ডিলারদের অভিযোগ গোডাউনের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে, যারা সরকারি নির্ধারিত রেটের বাইরে সার বিক্রি করে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে কৃষকদের হাতে সার পৌঁছে দেয়।
ডিলার আকবর আলী বলেন, গত পাঁচ বছরের গোডাউনের স্টক ও চলতি বছরের বরাদ্দের অডিট দুদক দিয়ে করানো হলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। সরকারি ডিলারের নাম ব্যবহার করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ বিক্রি আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোবিন্দ কুমার জোয়ার্দার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাগুরা জেলায় ৬৩ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ রয়েছে, যার মধ্যে ইউরিয়া ৩২,৩৪৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৭,৮৮৪ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৪,৮৯২ মেট্রিক টন এবং এমওপি ৮,২৬৯ মেট্রিক টন। ডিলারেরা এই সার কৃষকদের কাছে সরকারি নির্ধারিত দামের বাইরে সর্বোচ্চ ২ টাকা কেজি বেশি নিয়ে বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাগুরা বিএডিসির তিনটি গোডাউনে মজুদ রয়েছে টিএসপি ৪,২০০ টন, এমওপি ৩,৩৫০ টন এবং ডিএপি ৩,১০০ টন, সর্বমোট ১০,৬৫০ টন সার। জেলার মোট ডিলারের সংখ্যা ২১০টি এর মধ্যে মাগুরায় ১১৪টি এবং ঝিনাইদহে ৯৬টি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে সার না পেয়ে তারা খোলা বাজারে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে একদিকে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসন ও দুদক তদন্তে নেমে প্রমাণ মিললে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।