মাগুরার মহম্মদপুরে নবগঙ্গা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও অবৈধ এ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না। সরকার কর্তৃক ইজারকৃত বালু মহলের বাইরে উত্তোলনকৃত এসব বালু কোথাও ডাম্পিং করে বিক্রি করা হচ্ছে আবার কোথাও জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। অবৈধ এসব বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন, পাইপ, সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি জব্দ ধ্বংস বা নিলাম করার বিধান থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্র অর্থদণ্ড করার পর মুহূর্ত থেকে আবার যথারীতি বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে উত্তোলন কারীরা।
১২ অক্টোবর রবিবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবগঙ্গা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর যে স্থানের ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার আনুমানিক ১০০ মিটারের মধ্যে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মন্দির, একটি শ্মশান, এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক অবস্থিত যার প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের একটা বৃহৎ অংশ নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। ছোট নাওভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাইফুন নাহার জানান মাঝেমধ্যেই আমার স্কুলের পাশের ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে রাজাপুর ইউনিয়নের ফয়সালের পুত্র বিপ্লব। ইতিপূর্বে আমরা স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দিলে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়, কিছুসময় পর আবার চালু করে। অত্র বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, তাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের প্রায় অর্ধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুল ভবন এবং স্কুলের বাউন্ডারি হুমকির মধ্যে রয়েছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানের পাশ থেকে বালু উত্তোলন করলে অচিরেই পুরো বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যালয়টি রক্ষার স্বার্থে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন জানান, অত্র অঞ্চলের একমাত্র মন্দির এবং শ্মশান ঘাট নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। তার ওপর আবার মন্দির এবং শ্মশানঘাট থেকে মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই মন্দির এবং শ্মশান ঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অচিরেই অবৈধ এ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ চান তারা।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আক্তার মুঠোফোনে জানান, উপজেলার নাওভাঙ্গা গ্রামে নবগঙ্গা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অবগত হয়েছি, অত্র ইউনিয়নের দায়িত্বরত্ন তহসিলদার কে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
রাজাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহম্মদপুর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরজমিনে গিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরোও জানান ইতিপূর্বে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর অবৈধ বালু উত্তোলন কারী চক্রের প্রায় ২০-৩০ জন লাঠি সোটা নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘেরাও করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শ্মশান ঘাট, কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ নদীর পাড়ের জনবসতি রক্ষার স্বার্থে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি নদী পাড়ে বসবাসরত গ্রামবাসী এবং সচেতন মহলের।