বিশেষ প্রতিনিধি :
বেনাপোল কাস্টম হাউসের সাবেক কমিশনার এবং শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক বেলাল হোসাইন চৌধুরীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা নোটিশে তাদের আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে তার বাসার ঠিকানায় পাঠানো নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস যে, আপনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আপনার নিজ ও আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে বাড়ি, গাড়ি ও অবৈধ সম্পদসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের হাজির হওয়ার জন্য তলবও করা হয়েছিল।
যদিও অভিযোগগুলো অস্বীকার করে শুল্ক, রেয়াত ও প্রত্যার্পন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে আমার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল। কিন্তু অনুসন্ধানে আমার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ না পেয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি (নথিভুক্ত) করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এছাড়া দুদকে দাখিল করা একই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে এনবিআর তদন্ত করে। এনবিআরের সদস্য (শুল্কনীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া স্যারের নেতৃত্বে তদন্ত করেও আমার বিরুদ্ধে কিছুই পাওয়া যায়নি। অভিযোগ আমার নামে যেসব বাড়ি ও ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে।
তিনি আরও বলেন, দুদকের সাবেক এক উপপরিচালক আহসান আলীর করা মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার আয়কর ফাইলে যা আছে সেটাই আমার প্রকৃত সম্পদ, এর বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দুদক নোটিশ দিয়েছে, আমি আমার সম্পদের হিসাব জমা দেব।
এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এনবিআর ও দুদকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হয়। অভিযোগে শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামীয় এক ব্যবসায়ীর মালিকানা হিসেবে মেসার্স ট্রিনা অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলা হয়েছে। অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে ধানমন্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া অভিযোগে ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর নামে উল্লেখ করা হয়।
ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বেলাল চৌধুরীর নামে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বসুন্ধরা জি-ব্লকে ১০ কাঠা জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ি রয়েছে বেলাল চৌধুরীর। এছাড়া বেলাল চৌধুরীর নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ২ কোটি টাকা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়।
অন্যদিকে নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। ৪৫ নিউ ইস্কাটনে যে ফ্ল্যাটে বেলাল চৌধুরী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটের মালিকানার সত্যতা পাওয়াগেছে।
শিরোনাম :
অবৈধ সম্পদের পাহাড় কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর!
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ০৪:০১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২
- ৯৯৫ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ