নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর প্রকৌশল বিভাগ (পুর) যেন সকল আইন কানুনের উর্ধ্বে। এই বিভাগটিতে বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর এসব প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ঠিকাদার নির্বাচন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি ও প্রধান প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ মতে প্রধান প্রকৌশলী মো: মহিদুল ইসলাম তার পকেটস্থ কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে শেয়ারের ঠিকাদারী ব্যবসা করছেন। আর তাদেরকে কাজ দেওয়ার জন্য ওপেন টেন্ডার (ওটিএম) না করে ডাইরেক্ট টেন্ডার ( ডিটিএম) পন্থা অবলম্বন করছেন। ফলে বেকলমাত্র তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য কোন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছেন না।
খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, বিগত ৮বছর যাবৎ তিনি একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট তৈরী করে কেবল তাদের ফার্মকেই কার্যাদেশ প্রদান করছেন।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ১০% কমিশন আদায় করে সেটি ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।
সুত্রগুলো আরো জানায়, প্রধান প্রকৌশলী মো: মহিদুল ইসলাম প্রায় একযুগকাল ধরে প্রকৌশল বিভাগে অবস্থান করছেন। এতো দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে থাকায় তিনি বিভাগটিকে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে যা খুশি তাই-ই করে যাচ্ছেন। তিনি গত ১৩/০১/৯০ ইং তারিখে প্রকৌশল বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী
পদে যোগদান করেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলী পদেই রয়েছেন ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল ( অদ্যাবধি) পর্যন্ত।
এই ৮ বছর প্রধান প্রকৌশলী পদে থেকে তিনি অবৈধ পথে শত কোটি টাকা ও সম্পদের মালিক
হয়েছেন বলে দাবী করেছেন একটি মহল। তারা মনে করেন যে, দুদক তদন্ত করলেই তার
থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে।
তিনি পিপি আর এর শর্ত ভংগ করে ইজিপি টেন্ডার না করে ডাইরেক্ট টেন্ডার করে নানা কৌশলে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা,কর্মচারি ও ঠিকাদাররা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান একজন সৎ ও সহজ সরল মানুষ। তাকে ভুল বুঝিয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো: মহিদুল ইসলাম একটার পর একটা ফাইল পাশ করিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে এই প্রকৌশল বিভাগে যে সব অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভংগ করেছে।
সুত্রমতে এর আগে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীতীরে পিলার স্থাপন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ১৪টি লটে ২৮৭ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠে এই প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের ( বিআইডব্লিউটিএ) শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার পছন্দের ব্যক্তিদের এসব কাজের অলিখিত অংশীদার করা হয়েছিলেন। ওই অংশীদারিত্ব রক্ষায় নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া নিশ্চিত করতে প্রাক্কলিত সর্বশেষ গোপন দরটিও তাদের দেওয়া হয়। এর প্রমাণ মেলে, ওই দরের সঙ্গে সংগতি
রেখেই পয়সা পর্যন্ত মিলিয়ে ১০ কোটি থেকে ৪২ কোটি টাকা দরের ১৪টি পৃথক লটের টেন্ডার জমা দেন ঠিকাদাররা।
১৪টি লটের একটিও যাতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বাইরে কেউ না পায় সেজন্য অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করে সংস্থাটি। প্রতিটি প্যাকেজে দুটি করে প্রাক্কলন করা হয়। ক্রয় সংক্রান্ত আইনে এ ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, প্রতিটি প্যাকেজে অতিরিক্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত করে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত দর ধরতে বিআইডব্লিউটিএ নির্দিষ্ট ‘শিডিউল অব রেটস’ উপেক্ষা
করা হয় যেটিও নিয়মবহির্ভূত।
জানা গেছে, এসবই ঘটেছে ‘ঢাকার চারপাশে চার নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেই ব্যয় ৩৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ১৮১ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রস্তাব করে বিআইডব্লিউটিএ । প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন থেকে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হয়েও কারো কাছে কোন প্রকার জবাবদিহি করতে রাজী নন। তার নামে যে অফিসিয়াল মোবাইল ফোন বরাদ্দ রয়েছে সেটিতে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়না। তিনি গণমাধ্যমকেও কোন তথ্য দিতে চান না। সাংবাদিকদের সব সময় এড়িয়ে চলেন। যা তার একটি ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। এ প্রতিবেদক প্রায় এক সপ্তাহকাল তার সেল ফোনে কল করেও কথা বলতে পারেন নি। তিনি কোন কল রিসিভ করেন না। এমন কি তথ্য অধিকার আইনে
আবেদন করলেও তিনি অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করে সাংবাদিকদের হয়রানি করে থাকেন। তার এধরণের আচরণ সরকারি চাকুরী শৃংক্ষলা বিধির সুস্পষ্ট লংঘন বলে মনে করেন সাংবাদিক সমাজ।
একধিক সুত্রের দাবী প্রধান প্রকৌশলী মো: মহিদুল ইসলাম ঢাকার ফাইভ স্টার ও
থ্রিস্টার হোটেলে বসে ঠিকাদারদের সাথে ঘুস আদান প্রদান করেন। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ অফিসার ক্লাবে বসেও গোপন ডিলগুলো সম্পন্ন করেন।
বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএতে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নাধিন রয়েছে সেগুলো হলো: ১. ওয়াকওয়ে এবং অন্যান্য সহযোগী নির্মাণ উত্তর তীরে ঊারপঃবফ-এ কাজ।
ডাকাতিয়া নদীর শেখাটিয়া ব্রিজ থেকে মো শারস্তি উপজেলার শুচিপাড়া ব্রিজ চাঁদপুর জেলা।) জুলাই ২০২০-জুন ২০২২ ৪২৪৮.৩৭ ২. তিনটি ডিজিপিএস বীকনের আধুনিকীকরণ। কন্ট্রোল স্টেশন এবং সহ স্টেশন মনিটরিং স্টেশন (১ম সংশোধিত) জুলাই ২০১৬ – জুন ২০২২ ১৯৬৮.০০ ৩. ৫৩টি নদীপথের ক্যাপিটাল ড্রেজিং অভ্যন্তরীণ জলপথ (১ম পর্যায়: ২৪ নদী রুট) (২য় সংশোধিত) জুলাই ২০১২ -জুন ২০২২। ১৯২৩০০.০০ ৪. আনুষঙ্গিক সহ ২০টি ড্রেজার সংগ্রহ সরঞ্জাম এবং আনুষাঙ্গিক (১ম সংশোধিত) জুলাই ২০১৫ -জুন ২০২২ ২০৮৭৯৯.৮৭।
৫. মংলা থেকে নাব্যতার উন্নতি চাঁদপুর-মাওয়া হয়ে পাকশী নদী পথে- গুয়ালান্ডা জুলাই ২০১৭ – জুন ২০২৫ ৯৫৬০০.০০ ৬. এ বন্দর সুবিধা স্থাপন নগরবাড়ী (১ম সংশোধিত) জুলাই ২০১৮ -জুন ২০২২.৫৫২৯৫.০০ ৭. বিভাজন নির্মাণ ও ইনস্টলেশন পিলার, ওয়াকওয়ে, ব্যাঙ্ক সুরক্ষা, জেটি ঊারপঃবফ ঋড়ৎবংযড়ৎব এ মিত্র কাজ সহ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর ভূমি এবং শীতলখ্যা (২য় পর্যায়) জুলাই ২০১৮ -জুন ২০২২ ৮৪৮৫৫.০০ ৮. এর উন্নতি এবং পুনরুদ্ধার।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদী সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন ২০২৪ ৪৩৭১০০.০০ জুলাই ২০২০ (সারাংশ) ২ ৯. আনুষঙ্গিক সহ ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহসরঞ্জাম এবং আনুষাঙ্গিক অক্টোবর ২০১৮ – জুন ২০২৩ ৪৪৮৯০৩.৪২ ১০. বিশেষ ধরনের নির্মাণ এবং স্থাপন সংযুক্ত সুবিধা সহ টার্মিনাল পন্টুন জুলাই ২০১৮ – ডিসেম্বর ২০২১ ১৬২৭১.১৮ ১১. ঢাকা-লক্ষীপুর প্রতিষ্ঠা মেঘনায় নৌ চলাচলের রুট (নিম্ন) নদী জানুয়ারী ২০২০ – জুন ২০২২ ৪৯৮৮.০০ ১২. নদী বন্দরের আধুনিকীকরণ সহ পাটুরিয়া এবং দৌলতদিয়ার সহযোগী সুবিধা জানুয়ারী ২০২০ – ডিসেম্বর ২০২২ ১৩৫১৭০.০০ ১৩. বাংলাদেশ আঞ্চলিক নৌপথ পরিবহন প্রকল্প- ১ (চট্টগ্রাম-ঢাকায় ড্রেজিং- আশুগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ করিডোর সহ সংযুক্ত সংযুক্ত রুট এবং নির্মাণ।
সংযুক্ত অবকাঠামো সহ টার্মিনাল) (১ম সংশোধিত) জুলাই ২০১৬ -ডিসেম্বর ২০২৫ ৩৩৪৯৪২.০০
১৪. অভ্যন্তরীণ ধারক নদী স্থাপন আশুগঞ্জ বন্দর (জুলাই ২০১৮-ডিসেম্বর ২০২১)। ১২৯৩০০.০০
১৫. এর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সংগ্রহ এর জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ সহ হাইড্রোলিক ইঞ্জিন বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ, জুলাই ২০১৯ -ডিসেম্বর ২০২১ ৪১৭.৯৮। সম্প্রতি অনুমোদিত প্রকল্প ১৬. চিলমারিতে নদী বন্দর স্থাপন এলাকা (রোমনা, জোরগাশ, রাগিবপুর, রৌমারী, নয়ারহাট) জুলাই ২০২১ – ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩৫৫৯.০০ ১৭. স্ট্যান্ডার্ড উচ্চ জল নির্ধারণ লেভেল,
স্ট্যান্ডার্ড লো ওয়াটার লেভেল এবং অভ্যন্তরীণ পুনঃ শ্রেণীবিভাগ বাংলাদেশের জলপথ জুলাই ২০২১ -জুন ২০২৩ ১৮৯১.৪১।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান প্রকৌশলী মো: মহিদুল ইসলামের সেল ফোন ও অফিস ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
প্রকৌশল বিভাগের এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লোপাটকারিদের বিরুদ্ধে দুদকের মাধ্যমে প্রকল্প ফাইলগুলো নীরিক্ষা ও তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিযৈ আসবে বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএর দেশ প্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।