২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার খবর সংবাদমাধ্যমে আসতে না আসতেই দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর কিছু খুচরা দোকানে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমে আসতে পারে।
আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত ভারতীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মূলত দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে দেশের সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
গণমাধ্যমটি জানায়, ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, পেঁয়াজ রপ্তানিনীতি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিজিএফটির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, তবে কোনো দেশের অনুরোধ থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে অনুমতি দেয় যদি তাহলে রপ্তানি হবে।
এর আগে গত অক্টোবরের শেষ দিকে দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির সর্বনিম্ন মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছিল ভারত। সে সময় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি টন পেঁয়াজের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। নতুন এই মূল্যসীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলেও সে সময় বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি)। তারও আগে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং রপ্তানির লাগাম টানতে গত আগস্টে ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। সে সময় জানানো হয়, পেঁয়াজের নতুন রপ্তানিশুল্ক ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই মুহূর্তে দেশের পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ নেই। যতবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, দেশে ঠিক ততবার অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও আমদানি পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়েছে। পাশাপাশি নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তাই তদারকির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হয় অসাধু চক্র ফের ভোক্তার পকেট কাটবে।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালেই রাজধানীর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। তবে সন্ধ্যার পরই পাল্টে যায় পেঁয়াজের বাজারের দৃশ্যপট। বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি করে।
এর আগে ঢাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজে বেড়েছে ১০-২০ টাকা। প্রতিদিনের বাংলাদেশের যশোর প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো চিঠি বেনাপোল বন্দর পায়নি, কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার অথেলো চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।
কাওরান বাজারে আসা ক্রেতা সোলাইমান হোসেন বলেন, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর পাই সন্ধ্যায়। তখনই বুঝতে পারি এর দাম বেড়ে যাবে। তাই দ্রুত বাজারে চলে আসি। কিন্তু এসে দেখি আমি আসার আগেই দাম বেড়ে গেছে। দুই রকম পেঁয়াজের দাম ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হবে। এখনই পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ আসছে। দেশের পেঁয়াজ এলে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আমরা ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হব না। তবে কয়েকটা দিন আমাদের কিছুটা হিসেব করে চলতে হবে।’