বান্দরবানে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এমন এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যা এখন স্থানীয় জনপদের জন্য স্পষ্ট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—দীর্ঘদিনের ‘শেখ পরিবার’ পরিচয়ে চলা দলীয় কারবারিদের স্থান দখল করে এখন বালু নিয়ন্ত্রণের শীর্ষে উঠে এসেছেন বান্দরবান যুবদলের দুই নেতা—কাজী মো. হেলাল উদ্দিন ও মোরশেদুল আলম।
চায়ের দোকান, বাজার, গ্রাম—সব জায়গায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—
সাঙ্গুর বুকে গভীর ক্ষত—গ্রাম–স্কুল–বসতবাড়ি ঝুঁকিতে রেইছা ও গোয়ালিয়াখোলা এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়— চর কেটে তৈরি করা বিশাল গর্ত, নদীর স্বাভাবিক স্রোতধারা বিঘ্নিত,দুই তীরে দ্রুত নদীভাঙন, ঝুঁকিতে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও দোকানপাট, স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়—
“এক রাতেই ৩–৪ ফুট জমি নদীতে চলে যায়। আগামী বর্ষায় পুরো গ্রামটাই ভেসে যেতে পারে।”
পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলছেন—
“এভাবে চললে সাঙ্গু নদীর গতিপথই পাল্টে যাবে।”
রাতের আঁধারে ‘নিঃশব্দ তাণ্ডব’—যেখানে চলে ট্রাক–এক্সকাভেটরের মহড়া,
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়—
রাত হলেই শুরু হয় বালু তোলার অভিনব মহড়া
১০–১২টি ট্রাক সারারাত দাপিয়ে বেড়ায়
এক্সকাভেটরের উচ্চ শব্দে অস্থির পরিবেশ
ভোরের আগে লম্বা ট্রাকের সারি
বলগেট, বড় ‘মাসিন’, ভারী যন্ত্রপাতি—এক মুহূর্তও থামে না
স্থানীয়দের দাবি—
“রাতে পুরো এলাকা যেন সিন্ডিকেটের রাজত্বে থাকে।”
যুবদল নেতা হেলাল–মোরশেদ: রাজনৈতিক পরিচয়ই ‘ঢাল’—অভিযোগ স্থানীয়দের
কাজী মো. হেলাল উদ্দিন (৪৬)
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বান্দরবান জেলা যুবদল
বিভিন্ন সময় বিতর্কের জন্ম দেওয়া ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত
অভিযোগ—রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে বালু ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন
মোরশেদুল আলম (৪৫), যুগ্ম আহ্বায়ক, বান্দরবান সদর উপজেলা যুবদল
অভিযোগ—মাঠপর্যায়ের উত্তোলন, ট্রাক পরিচালনা ও শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ তিনিই দেখেন
স্থানীয়দের বক্তব্য—
“যুবদলের নামই তাদের বর্ম। কেউ বাধা দিতে গেলেই ভয়ভীতি দেখানো হয়।”
ধুলো–দুর্ভোগে জনজীবন বিপর্যস্ত
রেইছা–গোয়ালিয়াখোলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন—
“রাতে ট্রাক চলে, সকালে ধুলায় শ্বাস নেওয়া যায় না। বাচ্চারা কাশে, বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। নদীভাঙনে ঘরবাড়িও ঝুঁকিতে।”
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাধা দিলে সিন্ডিকেট রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করে।
অভিযুক্ত নেতার বক্তব্য
যোগাযোগ করা হলে কাজী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন—
“আগে রাস্তার কাজ চলছিল, তখন বালু তুলতাম এখন তুলি না।”
এ কথা বলেই তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
প্রশাসনের অবস্থান
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান—
“অতীতে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। আবারও প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), মারুফা সুলতানা খান হিরা মনি বলেন—
“অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান প্রতিনিধি : 















