ঢাকা ১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা নির্বাচনে এমপি পুত্র ও জামাতার মনোনয়নপত্র জমা বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করতে হবে–স্পীকার অপশক্তিকে বিতাড়িত করতে হলে ভালো মানুষকে ভোট দিন- কামাল হোসেন টিকেট নিয়ে সেনা সদস্য-টিটিই’র বাকবিতন্ডা; ট্রেনের ভিতরে ভাংচুর সেনা সদস্য সহ আহত-৫ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় গুণী শিক্ষক মোসা. আখতার বানুর অবসরজনিত বিদায় অনুষ্ঠিত কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর নামে দুদকের মামলা আ. লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে স্পীকারের শোক নওগাঁয় পানির অভাবে ১শ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছ নওগাঁর ধামইরহাটে বাড়ছে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী: ডাক্তারসহ শয্যা সংকট
মা হলেন পাগলী, বাবা হলেন না কেউ

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিনের কোলে শিশু মো. লাকিত হোসেন

তখন সবেমাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ একটি শিশুর কান্নার শব্দ। পাশের বাড়ি থেকে ছুটে এলেন এক নারী। দেখলেন একটি ঝুপড়ি ঘরে সদ্য ভূমিষ্ট এক পুত্র সন্তান কাঁদছে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। খবর পেয়ে ছুটে এলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা করলেন মানবিক এই সরকারি কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের উত্তর পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায় পার্শ্ববর্তী এক গৃহিনী মেহেরুন বেগম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঝুপড়ির ঘরের কাছে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পান মেহেরুন বেগম। এরপর তিনি ওই শিশুটিকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা করেন। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিশুটির দায়িত্ব নিতে কোটালীপাড়া ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকার ১০ দম্পতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ছুটে আসেন।

এই ১০ দম্পতির মধ্যে যাচাই বাছাই করে বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন তার কার্যালয়ে বসে ফরিদপুর সদরের ব্যবসায়ী নিঃসন্তান এক দম্পতির হাতে সন্তানটিকে তুলে দেন।

এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ইব্রাহিম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, ২ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচীসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মেহেরুন বেগম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার বাড়ির পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে ওখানে ছুটে যাই। গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসি।

বান্দল গ্রামের বশির আহম্মেদ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে এই এলাকায় একজন অন্তঃসত্ত্বা পাগলী নারীকে ঘোরা ফেরা করতে দেখেছি। সে অধিকাংশ সময়ই ওই ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতো। আমাদের ধারণা এই শিশু সন্তানটি ওই পাগলী নারীরই হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, আমি শিশুটির কথা শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে তার চিকিৎসা, খাবার, পোশাকসহ সব ব্যবস্থা করি। এরপর শিশুটির নাম রাখি মো. লাকিত হোসেন (কুড়িয়ে পাওয়া উত্তম সন্তান)। শিশু লাকিত হোসেনের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ১০ দম্পতি তার দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমার কাছে আসে। এই ১০ দম্পতির মধ্যে থেকে যাচাই বাচাই করে আইনী প্রক্রিয়া শেষে ফরিদপুরের এক ব্যবসায়ী নিঃসন্তান দম্পতিকে শিশুটিকে লালন পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই নিঃসন্তান দম্পতি বলেন, আমাদের কোনো সন্তান নেই। আর কোনো দিন আমরা মা বাবা হতে পারবো না। আমরা শিশু মো. লাকিত হোসেনকে পেয়ে খুবই আনন্দিত। সবাই লাকিতের জন্য দোয়া করবেন। ও যেন সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থেকে মানুষ হতে পারে।

ট্যাগস

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে উপজেলা নির্বাচনে এমপি পুত্র ও জামাতার মনোনয়নপত্র জমা

মা হলেন পাগলী, বাবা হলেন না কেউ

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিনের কোলে শিশু মো. লাকিত হোসেন

আপডেট টাইম : ০১:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তখন সবেমাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ একটি শিশুর কান্নার শব্দ। পাশের বাড়ি থেকে ছুটে এলেন এক নারী। দেখলেন একটি ঝুপড়ি ঘরে সদ্য ভূমিষ্ট এক পুত্র সন্তান কাঁদছে। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। খবর পেয়ে ছুটে এলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা করলেন মানবিক এই সরকারি কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের উত্তর পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায় পার্শ্ববর্তী এক গৃহিনী মেহেরুন বেগম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঝুপড়ির ঘরের কাছে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পান মেহেরুন বেগম। এরপর তিনি ওই শিশুটিকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে শিশুটির চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা করেন। এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিশুটির দায়িত্ব নিতে কোটালীপাড়া ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকার ১০ দম্পতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ছুটে আসেন।

এই ১০ দম্পতির মধ্যে যাচাই বাছাই করে বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন তার কার্যালয়ে বসে ফরিদপুর সদরের ব্যবসায়ী নিঃসন্তান এক দম্পতির হাতে সন্তানটিকে তুলে দেন।

এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ইব্রাহিম, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভ, ২ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচীসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মেহেরুন বেগম বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার বাড়ির পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে ওখানে ছুটে যাই। গিয়ে একটি সদ্য ভূমিষ্ট পুত্র সন্তানকে দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসি।

বান্দল গ্রামের বশির আহম্মেদ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে এই এলাকায় একজন অন্তঃসত্ত্বা পাগলী নারীকে ঘোরা ফেরা করতে দেখেছি। সে অধিকাংশ সময়ই ওই ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতো। আমাদের ধারণা এই শিশু সন্তানটি ওই পাগলী নারীরই হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, আমি শিশুটির কথা শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছুটে গিয়ে তার চিকিৎসা, খাবার, পোশাকসহ সব ব্যবস্থা করি। এরপর শিশুটির নাম রাখি মো. লাকিত হোসেন (কুড়িয়ে পাওয়া উত্তম সন্তান)। শিশু লাকিত হোসেনের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ১০ দম্পতি তার দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমার কাছে আসে। এই ১০ দম্পতির মধ্যে থেকে যাচাই বাচাই করে আইনী প্রক্রিয়া শেষে ফরিদপুরের এক ব্যবসায়ী নিঃসন্তান দম্পতিকে শিশুটিকে লালন পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই নিঃসন্তান দম্পতি বলেন, আমাদের কোনো সন্তান নেই। আর কোনো দিন আমরা মা বাবা হতে পারবো না। আমরা শিশু মো. লাকিত হোসেনকে পেয়ে খুবই আনন্দিত। সবাই লাকিতের জন্য দোয়া করবেন। ও যেন সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থেকে মানুষ হতে পারে।