একই মন্ত্রণালয়ে ১৬ বছর চাকুরী করে রেকর্ড গড়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সলিম উল্লাহ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হলেও আওয়ামী সুবিধাভোগী এই আমলা এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার পরিচিতি নং ৬৩২৯। তিনি একজন অঘোষিত ফ্ল্যাট সম্রাট হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার মালিকানায় রয়েছে ঢাকা শহরে এক ডজনেরও বেশী ফ্ল্যাট। স্ত্রী এবং দুই সন্তানের ব্যবহারের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ৩টি প্রাইভেট কার। তার নিজের নামে অল্প কিছু সম্পদ থাকলেও স্ত্রী এবং সন্তানেরা বিপুল পরিমাণ বিত্ত বৈভবের মালিক। যাদের নামে রয়েছে মোহাম্মদপুরস্থ জাপান গার্ডেন সিটিতে একাধিক ফ্ল্যাট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে প্লট এবং ফ্ল্যাট, মিরপুরে রয়েছে ৫টি ফ্ল্যাট, হাতিরঝিলের প্রবেশ মুখে সুরম্য ভবনে রয়েছে বিলাস বহুল ফ্ল্যাট, আরো রয়েছে মধুবাগ মগবাজারে শ^শুরের নামে একটি বাড়ী। যার সব কিছুই অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জন করা হয়েছে। এ যেন আরেক বেনজীর-মতিউর। তার মাসিক বেতনের সাথে ব্যয়ের অসংগতির বিষয়টি সুস্পষ্ট। তার তিনজন গাড়ী চালকের মাসিক বেতন ৭৫,০০০/- টাকা, তিনটি গাড়ীর জ্বালানী খরচ কমপক্ষে ১৫,০০০/- টাকা এবং সাথে যুক্ত হবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। সংগত কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মোঃ সলিম উল্লাহ অতিরিক্ত সচিবের আয়ের সাথে ব্যায়ের ব্যাপক অমিল রয়েছে-অবৈধ আয় না থাকলে তার পরিবারের সদস্যদের বিলাসী জীবন যাপন কি করে সম্ভব হয়?
সরকারী চাকুরীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে অনিয়ম আর দূর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চাকুরী জীবনের এক বিরাট সময় অতিবাহিত করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসাবে তার চাকুরীর মেয়াদকাল মাত্র ১৬ বছর। কথিত পদোন্নতি বঞ্চিত তালিকায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং দ্যান দরবারের মাধ্যমে সোনার ডিম পাড়া হাঁস অবৈধ অর্থ আয়ের তীর্থস্থান শিল্প মন্ত্রণালয়ে পোষ্টিং ভাগিয়ে নেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ে তার অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বিসিআইসি, সুগার এন্ড ফুড, বিএসটিআই, বিটাক, বিসিকসহ অন্যান্য করপোরেশন, দপ্তর, অধিদপ্তরের আওতাধীনে উন্নয়ন প্রকল্পের ভৌত উন্নয়নের কাজের টেন্ডার বাণিজ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশ প্রকল্প পরিচালকের বরাতে জানা গেছে যে, মাটি ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন কাল্ভার্ট নির্মাণ ও অন্যান্য পুর্ত কাজের টেন্ডার কাজে রয়েছে তার অদৃশ্য কালোহাত। বিভিন্ন কলা-কৌশলে এবং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের প্রাক্কলিত মূল্য (এষ্টিমেটেড এমাউন্ট) সংগ্রহ করে তা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট সরবরাহ করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া যার অবৈধ আয়ের একটি অন্যতম উৎস। অবৈধ অর্থের আরেকটি উৎস হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেশনে সরবরাহ কাজ নিয়ন্ত্রণ। বিসিআইসির সার সরবরাহ এবং বিভিন্ন সরবরাহ কাজে রয়েছে তার কালোহাত।
সরকারের সাধারন বদলী নীতিমালা ভংগ করে একই মন্ত্রণালয়ের ১৬ বছর কমরত থাকার কারণে তিনি তৈরী করে নিয়েছেন নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট। তার সৃষ্ট সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কাজ করার ক্ষমতা কারো নেই। সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সাধারণ বদলী নীতিমালার বিধান হচ্ছে একই পদে ৩ বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার অব্যবহিত পূর্বেই মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও উহার অধীনস্থ দপ্তর/পরিদপ্তসমূহের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে নতুন পদে /স্থানে বদলী করিতে হইবে। ২২ মে ১৯৮৩ইং তারিখের মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত বিদ্যমান আছে যে, সরকারি ও বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/দপ্তর/পরিদপ্তর এবং অন্যান্য বদলীযোগ্য কর্মকর্তা যাহারা একই স্থানে/একই পদে তিন বৎসরের অধিককাল যাবত কর্মরত আছেন, তাহাদের অবিলম্বে বদলী করিতে হইবে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ অবশ্য এই আদেশের আওতাভূক্ত নহে। সাবেক সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) এর ১৩ জুন ১৯৮৩ইং তারিখের ইডি/এস এ ১-১৩/৮৩-২৫৭(১০০) নম্বর পত্রে উল্লেখ আছে যে, উল্লিখিত মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্তের কোন ব্যতিক্রম ঘটিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সরকারি আইন ও সরকারি বিধি অনুসারে চাকুরীচ্যুতি সহ যে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।
বিষয়টিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ সলিম উল্লাহ এর মতামত জানতে চাইলে তিনি মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন যে, সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি এবং তিনটি গাড়ী ব্যবহারের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত। মহাদুর্নীতিবাজ বেনজির-মতিউর ও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের দূর্নীতির বিষয়টি পর্যায়ক্রমে সামনে আসতে থাকে-প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাব দানে বিরত থাকেন মোঃ সলিম উল্লাহ। সরকারের তরফ হতে সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও মোঃ সলিম উল্লাহ নিজস্ব কলা-কৌশলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগনকে ম্যানেজ করে নির্ধারিত ৩ বছরের পরিবর্তে ১৬ বছর যাবত শিল্প মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন। মোঃ সলিম উল্লাহ,অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব দূর্নীতি দমন কমিশনের। অনুরূপভাবে বিদ্যমান সরকারী বদলী নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে একই মন্ত্রণালয়ে (শিল্প মন্ত্রণালয়ে) ১৬ বছর কর্মরত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। সর্বশেষ জানাগেছে,অতিরিক্ত সচিব সলিম উল্লাহ‘র জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের তদন্ত চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেছেন জনৈক এ কে আজাদ
শিরোনাম :
তদন্ত চেয়ে দুদকে অভিযোগ:
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিনি ১৬ বছর!
- খবর বাংলাদেশ ডেস্ক :
- আপডেট টাইম : ১০:৪২:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
- ৮০৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ