দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প এখন দুর্নীতির কালোকালিতে ডুবে গেছে। প্রকল্পটির নেতৃত্বে থাকা মুহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তার কর্মকাণ্ড শুধু প্রকল্পটিকে ব্যর্থ করে তোলেনি, বরং জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকার অপচয়ের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকল্প পরিচালনায় মুহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ গুরুতর। তার আত্মীয়দের নামে কার্যাদেশ প্রদান এবং তহবিলের অপব্যবহার প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তার শ্যালকের নামে মিডিয়া ব্র্যান্ডের এসি কেনার ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে। এছাড়া “Dhrupadi Techno Consortium Ltd.” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার কাজ আত্মসাৎ করা হয়েছে। তদুপরি, সরকারি তহবিল থেকে বিদেশ ভ্রমণের নামে তিনি বিপুল অর্থ অপচয় করেছেন, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
মুহাম্মদ জাকির হোসেনের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার স্ত্রীর নামে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এবং তার সম্পদের পরিমাণ তার প্রকৃত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অভিযোগ রয়েছে, যশোর ভ্যাট কমিশনার থাকাকালে তিনি কালো টাকা অর্জনে ভয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অডিটে অন্তর্ভুক্ত করতেন। সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে উঠেছে। জানা যায়, তার স্ত্রী ঢাকার বিমানবন্দরে সোনাসহ আটক হয়েছিলেন। এছাড়া পারটেক্স গ্রুপের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি বনানী ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন, যার জন্য তিনি কর ফাইলে প্রদর্শিত ৩০ লাখ টাকার উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ জাকির হোসেন লেখক পরিচিতি তৈরি করেছেন। তবে তার রচিত বইগুলো পাঠকদের মাঝে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। বরং এগুলো ব্যবস্থাপত্রেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ কর সংগ্রহ ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করে। করদাতাদের টাকা আত্মসাৎ করে মুহাম্মদ জাকির হোসেন যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা শুধু রাজস্ব ব্যবস্থাকেই কলঙ্কিত করেনি, বরং জনগণের অর্থ অপচয়ের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত এবং তার সম্পদ, কর ফাঁকি ও প্রকল্পে অর্থ অপব্যবহারের বিষয়টি যাচাই করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা উচিত। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের ব্যর্থতা শুধু আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়; বরং এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করে। তাই এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনায় উদাহরণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধ করা সম্ভব হয়। এবিষয়ে মন্তব্য জানতে ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন জবাব দেননী।