ঢাকা ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ফেসবুক পোস্টের জেরে নওগাঁয় কলেজ শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ তরুন প্রজন্মের চিন্তা চেতনাকে নিয়ে কাজ করতে হবে- আমিনুল হক জয়পুরহাটে ক্ষেতলালে নিখোঁজের ৯ দিন পর আলোচিত কাফির লাশ উদ্ধার সিরাজদিখানে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও হামলা: আহত-৫ আদমদীঘিতে প্রতারণা করে বোনদের সম্পত্তি লিখে নিল ভাই মিরপুর ইস্টার্ণ হাউজিং ডাইং ফ্যাক্টারিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহাউৎসব প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় গ্রেফতার বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশন বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলন- মাওলানা ইমতিয়াজ আলম রাজউককে জনবান্ধব করতে আইন ও বোর্ডের গঠন বদলাতে হবে- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিরাজদিখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

নদী, পাহাড় ও বন রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা

আব্দুল্লাহ আল শাফী-
দেশের নদী, পাহাড় ও বন রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরিবেশ উপদেষ্টা পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। তিনি বনাঞ্চল সংরক্ষণে মধুপুর শালবনের সীমানা চিহ্নিতকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও সংরক্ষিত বন এবং নদী ও জলাশয়ের রেকর্ড সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা, সড়কের পাশে পাহাড়ের ঢালে সংরক্ষিত বন ঘোষিত এলাকায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৫১ একরের আবাসন প্রকল্পটি বাতিলের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বনের জায়গায় স্থাপিত রাজা কাশিমের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫ এ জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

উপদেষ্টা বলেন, শতবর্ষী, প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে। নদীর তালিকা ধরে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, সমুদ্র সৈকত, হাওড়, দ্বীপ ও বনাঞ্চলে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, বালু ও পাথর উত্তোলনের আগে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। দূষণবিরোধী অভিযানে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সহায়তা গ্রহণের ওপরও তিনি জোর দেন। দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন এবং বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণের আহ্বান জানান।

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবেশ অপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন, পরিবেশ স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকা তৈরি এবং পরিবেশ পদক ও বৃক্ষরোপণ পদকের জন্য ব্যক্তি ও সংস্থা নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দেন।

উপদেষ্টা বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পলিথিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাজারে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পুরাতন কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করে তা প্রচলনের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি সকল সরকারি কর্মস্থলকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মুক্ত করার নির্দেশনা দেন এবং হর্ন নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া, সকল পুকুরের তালিকা প্রণয়ন, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে জলাশয় উদ্ধার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার আহ্বান জানান। যেখানে উপযুক্ত, সেখানে নগরবন, পার্ক বা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান গড়ে তোলার নির্দেশনাও তিনি দেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকদের কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানসহ পরিবেশ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরসমূহের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনে উপস্থিত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের পরিবেশ, বন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা প্রতিটি বিষয় বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ফেসবুক পোস্টের জেরে নওগাঁয় কলেজ শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ

নদী, পাহাড় ও বন রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা

আপডেট টাইম : ১২:৫৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আব্দুল্লাহ আল শাফী-
দেশের নদী, পাহাড় ও বন রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পরিবেশ উপদেষ্টা পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। তিনি বনাঞ্চল সংরক্ষণে মধুপুর শালবনের সীমানা চিহ্নিতকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও সংরক্ষিত বন এবং নদী ও জলাশয়ের রেকর্ড সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা, সড়কের পাশে পাহাড়ের ঢালে সংরক্ষিত বন ঘোষিত এলাকায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ৫১ একরের আবাসন প্রকল্পটি বাতিলের নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বনের জায়গায় স্থাপিত রাজা কাশিমের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫ এ জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

উপদেষ্টা বলেন, শতবর্ষী, প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে। নদীর তালিকা ধরে প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি, সমুদ্র সৈকত, হাওড়, দ্বীপ ও বনাঞ্চলে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, বালু ও পাথর উত্তোলনের আগে অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। দূষণবিরোধী অভিযানে পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ এবং প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সহায়তা গ্রহণের ওপরও তিনি জোর দেন। দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন এবং বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণের আহ্বান জানান।

হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিবেশ অপরাধীদের তালিকা প্রণয়ন, পরিবেশ স্বেচ্ছাসেবীদের তালিকা তৈরি এবং পরিবেশ পদক ও বৃক্ষরোপণ পদকের জন্য ব্যক্তি ও সংস্থা নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দেন।

উপদেষ্টা বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পলিথিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাজারে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। বিকল্প ব্যবস্থার অংশ হিসেবে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পুরাতন কাপড়ের ব্যাগ তৈরি করে তা প্রচলনের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি সকল সরকারি কর্মস্থলকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক মুক্ত করার নির্দেশনা দেন এবং হর্ন নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এছাড়া, সকল পুকুরের তালিকা প্রণয়ন, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে জলাশয় উদ্ধার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার আহ্বান জানান। যেখানে উপযুক্ত, সেখানে নগরবন, পার্ক বা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান গড়ে তোলার নির্দেশনাও তিনি দেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসকদের কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানসহ পরিবেশ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরসমূহের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনে উপস্থিত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের পরিবেশ, বন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা প্রতিটি বিষয় বিবেচনা করার আশ্বাস দেন।