আব্দুল্লাহ আল শাফী-
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, আমরা চাই সরকার প্রধান ও তার নিয়োগ কর্তারা ক্ষমতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসুক। জনগণ যদি তাদের গ্রহণ করে আমরা গ্রহণ করবো। আবারো বলছি, এই মুহুর্তে অবাস্তব সংস্কার চাই না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া কেউই সংস্কার করতে পারবে না। আমাদের কর্মসূচীতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন চলছে। আমরা আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করবো না। আপনারা দেশের অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর ভোটাধিকার দিতে চান না, আমরা আপনাদের ঐ চিন্তার ধার ধারি না। আমরা এদেশের সন্তান, এদেশের জন্য আমাদের ত্যাগ আছে। এদেশের জন্য আমরা কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবো। দেশের মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ না করে আমরা মাথা পেতে নেব, কিন্তু আপনারা আপনাদের সুবিধার জন্য আমাদের রাজনীতি বাঁধাগ্রস্ত করবেন তা মেনে নেব না। কোন ফ্যাসিবাদি সিদ্ধান্ত আমরা দেখতে চাই না। যতদিন পর্যন্ত নব্য ফ্যাসিবাদ বিতারিত না হবে, ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে। যেহেতু আপনি অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারছেন না, দয়া করে আপনি বিদায় হোন। আজ বিকেলে কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুস আমাদের সম্মানের পাত্র, তিনি আমাদের মাথার মুকুট। আপনি যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকেন। আপনি চলে যান, আপনাকে দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব হবে না। আপনার দ্বারা কোন সংস্কার আমরা বিশ^াস করি না। যারা সংস্কার করছেন, তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট জানেন না। আপনারা সংস্কার প্রস্তাবগুলো টেবিলে রেখে যান, পরবর্তী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারাই সংস্কার করবে। এই মুহুর্তে আমরা সংস্কার চাই না। সরকার প্রধান হিসেবে তার উপরে আমাদের কোন আস্থা নেই, আমরা তাকে চাই না। তারা যে সংস্কারের কথা বলছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। তারা যে নতুন দল করেছে তা পুরনো স্টাইলেই আগাচ্ছে। চাঁদাবাজি ও শোডাউনের রাজনীতি করতে গিয়ে তারা কাকের গায়ে ময়ুয়ের পালক লাগিয়েছে। তারা দেশের পরিবর্তনের জন্য কোন কাজ করছে না। যারা সরকারে থেকে দল করছেন, তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতির মাঠে আসুন। দেশের জনগণ যাকে মেনে নেয়, আমরাও তাকেই গ্রহণ করবো। সরকারের ক্ষমতা আর মববাজি দিয়ে দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালাবে আমরা তা মেনে নেব না। সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করে, এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য সাংবাদিকদের চাকরি চলে যাবে, টিভি স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে এমন কালচার আমরা দেখতে চাই না। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছি আরেক ফ্যাসিবাদকে গ্রহণ করতে নয়। আমরা এই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। আমরা নব্য ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের রুখে দিব। কোন কারণ ছাড়াই আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বের করে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। কোন আইনে রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখবেন? কেউ দোষ করলে এটা তার দল বা ধর্মের দোষ নয়। আপনারা কাউকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে পারবেন না। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে, সেই বুকের পাটা নিয়ে রাজপথে দাঁড়ান। বিচার ও সংস্কারের কোন টাইম লিমিট নেই, এগুলো সবসময় করা যায়। একসাথেই সব সংস্কার করবেন বিষয়টা এমন নয়। চারা গাছ দিয়ে ফুল, ফল ও ছায়া সম্ভব নয়। চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতে হবে। যতই সার, পানি ও ইনজেকশন দেন চারা গাছকে বড় হতে সময় দিতেই হবে।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনের জন্য দেশের মানুষ স্বাভাবিক রাজনীতি করতে পারবে। দেশের মানুষ চায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচন। আমরা মনে করেছিলাম, বর্তমান অন্তর্ভূক্তিকালীন সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। অন্তবর্তিকালীন সরকার প্রধানের বিশ^ব্যাপী সুনাম আছে। আমরা ওনার উপর আস্থা রেখেছিলাম, আমরা নিরাশ হয়েছি। দেশকে তিনি ভালোভাবে চালাচ্ছেন না। সংস্কারের নামে একটি দল করা হয়েছে। তারা, চাঁদাবাজির মাধ্যমে পুরনো সংস্কৃতি লালন করছে। সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে চাঁদাবাজির মাধ্যমে শো-ডাউনের রাজনীতি শুরু করেছে সরকারের নতুন দলটি। যারা সংস্কার করছেন, তারা জ্ঞানি-গুনি ব্যক্তি। কিন্তু, সংস্কার যারা করবে তাদের সম্পর্ক থাকতে হবে দেশের মাটি ও মানুষের সাথে। কিন্তু, তারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা সম্বন্ধে জানেন না। তারা কিছু থিওরিক্যাল বিষয় নিয়ে কিছু সংখ্যক মানুষের সাথে আলাপ করছেন। দেশকে বিভক্ত করে, অর্ধেক মানুষকে বাদ দিয়ে কোন সংস্কারই সফল হবে না। সংস্কারের নামে বর্তমান সরকার দেশের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দেশের বাস্তবতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ বেকার হয়ে পড়েছে। আরো অনেকেই বেকার হওয়ার আশংকায় উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে অনেক কল কারখানা জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মিল কারখানা চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। মালিকপক্ষ যে দলই করুক শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ সমস্ত কলকারখানা চালু করার দাবী জানাচ্ছি। বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, দাম পাচ্ছে না। গেল রমজানে সরকার বাহাদুরি করে বলেছে, সব নিত্য পণ্যের দাম কম। কিন্তু, সরকার বোঝে নাই কৃষকদের কষ্ট। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এখন মালামালের দাম বেড়েছে, কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকের হাতে টাকা নেই এবং ব্যবসায়ীদের হাতেও টাকা নেই। প্রতিদিন রপ্তানি কমে যাচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বিশে^র কোন প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ঋণ দেবে না। বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না এবং দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি হবে না। এই সরকার দেশকে বিপদজনক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য- এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল,ভাইস-চেয়ারম্যান আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি মেফতাহ উদ্দিন জসিম এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শান্ত’র সঞ্চালনায় মে দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন – প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, নাজমা আকতার,এমরান হোসেন মিয়া,শেরিফা কাদের, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ,মনিরুল ইসলাম মিলন, মোঃ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ আরিফুর রহমান খান,
উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য-ড. নূরুল আজহার শামীম,হেনা খান পন্নী, এডভোকেট লাকি বেগম,হারুন অর রশিদ, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ,মাশরেকুল আজম রবি , জাহিদ হাসান,একেএম নূরুজ্জামান জামান,মাতলুব হোসেন লিয়ন, সুলতান মাহমুদ, মোঃ বোরহান উদ্দিন।
ভাইস-চেয়ারম্যান – গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সুলতান আহমেদ সেলিম,নূরুন্নাহার বেগম, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু,মোঃ হেলাল উদ্দিন, এম এ সোবহান, আকতার হোসেন দেওয়ান, মোঃ নোমান মিয়া, মোঃ হুমায়ুন খান।
যুগ্ম মহাসচিব – মোঃ শামসুল হক, এডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, শামীম আহমেদ রিজভী, মোঃ হেলাল উদ্দিন,দ্বিন ইসলাম শেখ,আবু সাঈদ স্বপ্ন, জুবের আলম রবিন।
সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য-নির্মল চন্দ্র দাস, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, আজাহারুল ইসলাম সরকার, মোঃ আব্দুল হান্নান, মিজানুর রহমান মিরু, মাহমুদ আলম, এম এ রাজ্জাক খান, হাফেজ কারী ইসারুহুল্লা আসিফ , মোড়ল জিয়া উর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা।
যুগ্ম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য-বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, এডভোকেট সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী, জাকির হোসেন মৃধা, শারমিন পারভীন লিজা,শেখ মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন,এস এম রহমান পারভেজ, শারিফুল ইসলাম অর্ণব, এডভোকেট আবু ওয়াহাব,রমজান আলী ভূঁইয়া,সমরেশ মন্ডল মানিক, ডাঃ সেলিমা খান,হুমায়ুন কবির শাওন, লোকমান ভূঁইয়া রাজু, ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের আহমেদ।
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা পার্টির তাসলিমা আকবর রুনা, জেসমিন নূর প্রিয়াংকা, জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক সুজন, কৃষক পার্টির সদস্য সচিব এম এ কুদ্দুস মানিক, মটর শ্রমিক পার্টির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শিপন, সদস্য সচিব আবদুর রহিম সহ প্রমুখ।