ঢাকা ০৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
গাজীপুরে ঝুকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে ফুটওভার ব্রীজের দাবীতে মানববন্ধন গাজীপুরে ২১০ পিস ইয়াবা ও সাড়ে ১১ লাখ টাকাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার প্রকল্পের টাকা হরিলুটের অভিযোগ ইউএনও এবং পিআইও’র বিরুদ্ধে ফরিদপুরে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা, জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রধান শিক্ষক নিহত খালেদা জিয়া যে কোনো সময়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যেতে পারেন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মহম্মদপুরে অসহায় রুগীর পাশে দাঁড়ালেন নয়ন সিরাজদিখানে লীজকৃত ফসলী জমির মাটি কাটার অভিযোগ, সংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি অন্তবর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে সব ধরণের সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য শিয়াল-কুকুরের দখলে ডিবি হারুনের শতকোটির রিসোর্ট!

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মধুখালীর গড়াই নদী থেকে ফের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

ফরিদপুর প্রতিনিধি :

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীর মছলন্দপুরে ১৮টি ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাগুরা জেলার রাজধারপুরের বালুমহালের ইজারাদার মো: আকিদুল মুন্সি আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গড়াই নদীর ফরিদপুর অংশের মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত বলে জানা গেছে।
গত ১ অক্টোবর মধুখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুর রহমান অভিযান পরিচালনা করার পরে সাময়িকভাবে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও দু’দিন বাদেই ফের এসব ড্রেজার বসিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের আশংকায় উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন নদী তীরের জনসাধারণ। অবৈধ উপায়ে এভাবে ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেখানে নদী ভাঙ্গনের তীব্র আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদী পাড়ের পাকা সড়ক সহ কৃষি জমি ও বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে, কোনপ্রকার ইজারা ছাড়াই মছলন্দপুর বালু মহাল সংলগ্ন গড়াই নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।
কামারখালীর সাবেক সালামতপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা এই মছলন্দপুর বালুমহালের পাশেই। ইতোপূর্বে বালি উত্তোলনের ফলে বীরশ্রেষ্ঠের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে মছলন্দপুর বালু মহালের সংলগ্ন গড়াই নদীর ওই অংশে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে বালুদস্যুরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, গড়াই নদীর বুকে ১৮ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বালু তোলা হচ্ছে। আকিদুল মুন্সি ও সৈয়দ আমির আলী সহ আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন একাজে।
জানা গেছে, চলতি বছর মাগুরা জেলা রাজধারপুর বালু মহাল ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নেন আকিদুল মুন্সি। তিনি রাজধারপুর বালুমহালের সাথে মছলন্দপুর থেকেও অবৈধভাবে বালি তুলছেন।
এ বিষয়ে রাজধারপুর বালু মহালের ইজারাদার আকিদুল মুন্সির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি মাগুরা জেলার রাজধারপুর বালুমহাল থেকে সরকারিভাবে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এখানে একটা সীমানা নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। আমি আমার সীমানা থেকেই বালি তুলছি। আপনি পারলে দুই ডিসির সাথে বলে নিশ্চিত হয়ে নিন। মছলন্দপুর ঘাট থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অভিযানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান করে। কারণ তাদের নামে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলেই তারা অভিযান চালায়।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে এই বালুমহালটি ৫৬ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিলো। এ বছর সেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় আমি ইজারা নিয়েছি। এই ঘাট পেতে আমার প্রায় ৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। এ কারণে প্রতিদিন ৭ লাখ টাকার বালু উত্তোলন না করলে ইজারার টাকা উসুল হবেনা।
এদিকে সৈয়দ আমির আলীর বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অনুসন্ধান জানা যায়, মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীর ওই অংশ থেকে বালি উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। তীব্র ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়ে বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্বৃতি জাদুঘর এলাকা সহ গন্ধখালী, দয়রামপুর, গয়েশপুর গ্রামসহ আশেপাশের এলাকা। এ অবস্থায় মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে একটি রীট করেন কামারখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান বাবু। ওই রীটের শুনানি শেষে আদালত মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন রশীদ এর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে কথা হয় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল্লা এর সাথে তিনি বলেন, এর আগেও মধুখালী উপজেলা প্রশাসন বরাবরের মতোই ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে। আপনি অফিসে আসেন দ্রুতই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুরে ঝুকিপূর্ণ রেলক্রসিংয়ে ফুটওভার ব্রীজের দাবীতে মানববন্ধন

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মধুখালীর গড়াই নদী থেকে ফের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

আপডেট টাইম : ১২:০১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

ফরিদপুর প্রতিনিধি :

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীর মছলন্দপুরে ১৮টি ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাগুরা জেলার রাজধারপুরের বালুমহালের ইজারাদার মো: আকিদুল মুন্সি আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গড়াই নদীর ফরিদপুর অংশের মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত বলে জানা গেছে।
গত ১ অক্টোবর মধুখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুর রহমান অভিযান পরিচালনা করার পরে সাময়িকভাবে সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও দু’দিন বাদেই ফের এসব ড্রেজার বসিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের আশংকায় উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন নদী তীরের জনসাধারণ। অবৈধ উপায়ে এভাবে ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে সেখানে নদী ভাঙ্গনের তীব্র আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদী পাড়ের পাকা সড়ক সহ কৃষি জমি ও বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। অন্যদিকে, কোনপ্রকার ইজারা ছাড়াই মছলন্দপুর বালু মহাল সংলগ্ন গড়াই নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে।
কামারখালীর সাবেক সালামতপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা এই মছলন্দপুর বালুমহালের পাশেই। ইতোপূর্বে বালি উত্তোলনের ফলে বীরশ্রেষ্ঠের বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে মছলন্দপুর বালু মহালের সংলগ্ন গড়াই নদীর ওই অংশে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে বালুদস্যুরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, গড়াই নদীর বুকে ১৮ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বালু তোলা হচ্ছে। আকিদুল মুন্সি ও সৈয়দ আমির আলী সহ আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন একাজে।
জানা গেছে, চলতি বছর মাগুরা জেলা রাজধারপুর বালু মহাল ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নেন আকিদুল মুন্সি। তিনি রাজধারপুর বালুমহালের সাথে মছলন্দপুর থেকেও অবৈধভাবে বালি তুলছেন।
এ বিষয়ে রাজধারপুর বালু মহালের ইজারাদার আকিদুল মুন্সির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি মাগুরা জেলার রাজধারপুর বালুমহাল থেকে সরকারিভাবে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এখানে একটা সীমানা নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। আমি আমার সীমানা থেকেই বালি তুলছি। আপনি পারলে দুই ডিসির সাথে বলে নিশ্চিত হয়ে নিন। মছলন্দপুর ঘাট থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অভিযানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান করে। কারণ তাদের নামে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলেই তারা অভিযান চালায়।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে এই বালুমহালটি ৫৬ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিলো। এ বছর সেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় আমি ইজারা নিয়েছি। এই ঘাট পেতে আমার প্রায় ৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। এ কারণে প্রতিদিন ৭ লাখ টাকার বালু উত্তোলন না করলে ইজারার টাকা উসুল হবেনা।
এদিকে সৈয়দ আমির আলীর বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অনুসন্ধান জানা যায়, মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীর ওই অংশ থেকে বালি উত্তোলনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। তীব্র ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে পড়ে বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্বৃতি জাদুঘর এলাকা সহ গন্ধখালী, দয়রামপুর, গয়েশপুর গ্রামসহ আশেপাশের এলাকা। এ অবস্থায় মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে একটি রীট করেন কামারখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান বাবু। ওই রীটের শুনানি শেষে আদালত মছলন্দপুর বালু মহাল থেকে বালি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন রশীদ এর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে কথা হয় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান মোল্লা এর সাথে তিনি বলেন, এর আগেও মধুখালী উপজেলা প্রশাসন বরাবরের মতোই ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে। আপনি অফিসে আসেন দ্রুতই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।