বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে পিপিআর রোগ নিমূল ও ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের অধীনে ২০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যকসিন ক্রয়ে চলছে তুঘলকি কান্ড। ৩৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে ৪টি জেলার (ভোলা, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ) এফএমডি রোগ প্রতিরোধের জন্য পাশ্ববর্তী দেশ হতে ২০০ কোটি টাকার এফএমডি ভ্যাকসিন এবং সারা দেশের জন্য ৪৫ কোটি টাকার পিপিআর ভ্যকসিন ক্রয়ের সংস্থান রাখা হয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে ১ম দফায় ৯৬ কোটি টাকার ভ্যকসিন ক্রয় করা হয় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংসদ বাহউদ্দীন নাসিমের ” অনফার্মা” নামক প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল অফিস রাশিয়া থেকে। ডিপিপির বত্যয় ঘটিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ হতে ক্রয় না করে ভ্যকসিনটি জয়েন্ট ভেনচারে সরবরাহ করে জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ভ্যকসিন ক্রয়কালে কর্তৃপক্ষ বিশেষ শর্তারোপ করায় ঐ একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানই রেসপনসিভ হয় এবং ৩৪ কোটি টাকা মূল্যের ভ্যকসিন ৯৬ কোটি টাকায় ক্রয় করে বিল পরিশোধ করা হয়। জানা মতে ভ্যকসিনগুলি ৩ বছর পূর্বে সরবরাহ নেয়া হলেও সবগুলি এখনও ব্যবহার করা হয়নি।
অবশিষ্ঠ ১০০ কোটি টাকার ভ্যকসিন ক্রয়ের জন্য ২ বছর পূর্বে দরপত্র আহব্বান করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে বাহউদ্দীন নাসিমের জন্য বিশেষ শর্তারোপ না করায় তার প্রতিষ্ঠান একক দরদাতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি। ঐ দরপত্রে টেকনো ড্রাগ সর্বনি¤œ দর প্রদান করলেও বাহাউদ্দীন নাসিম ও কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রের চাপের মূখে কর্তৃপক্ষ পুনরায় দরপত্র আহব্বান করতে বাধ্য হয়।
সর্বশেষ উক্ত ভ্যকসিন ক্রয়ের জন্য বিগত মে/২০২৪শে দরপত্র আহব্বান করা হয় এবং দরপত্র দাখিলের/জমা নেয়ার তারিখ নির্দ্ধারন করা হয় ২৩/০৬/২৪ ইং তারিখ। কিন্তু ঐ তারিখে আওয়ামী লীগ নেতা বাহউদ্দীন নাসিমের সাথে ঠিকাদারের কথা-বার্তা চুড়ান্ত না হওয়ায় দরপত্র দাখিলের পরবর্তী তারিখ নির্দ্ধারন করা হয় ০৩/০৭/২০২৪ইং। ওই তারিখের তাদের ঠিকাদার কাগজপত্রাদি ঠিক করতে না পারায় সময় বর্দ্ধিত করে পুনরায় তারিখ নির্দ্ধারন করা হয় ১৮/০৭/২০২৪ইং। ইতোমধ্যে সাবেক পরিচালক বাজেটের একজন ঠিকাদার দরপত্রের আংশিক স্পেসিফিকেশন ( সেলফ লাইফ) পরিবর্তনের আবেদন করলে ঐ ঠিকাদারের আবেদন গ্রহন করত: অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পিডি স্পেসিফিকেশনের শর্ত আংশিক পরিবর্তন করে পুনরায় সময় বৃদ্ধি করে ১২/০৮/২০২৪ তারিখ করে। এ সময় বাড়ানো ও শর্ত পরিবর্তনের জন্য বাহউদ্দীনের প্রতিনিধি কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ. ডা: হাবিব মোল্ল্যা ও আরো ২জন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে এসে প্রথমে পিডিকে ভয়ভীতি ও ধমক দেন এবং পরিচালক বাজেটের রুমে এসে অন্য ঠিকাদারের পক্ষে কাজ করার অজুহাতে রুম বন্ধ করে প্রচন্ড মারধর করেন। এতে পরিচালক বাজেট অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং হাসপাতালে ভর্ত্তি হন যা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সকলেই জানে। এ অবস্থায় পিডি কোন প্রকার কারণ ছাড়াই পুনরায় ১৫দিনের সময় বৃদ্ধি করে দরপত্র দাখিলের দিন নির্দ্ধারন করে ২৭/০৮/২০২৪ ইং এবং ঐ দিনই ৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ গ্রহন করে।
দরপত্রে অংশ গ্রহনকারী ৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ম ,২য় ও ৬ষ্ঠ নি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কোন কাগজপত্রাদি সঠিক না থাকায় প্রাথমিক পর্য্যায়ে বাদ পড়ে যায়। ৩য় সর্বনি¤œ দরদাতা হিসাবে বাহউদ্দীন নাসিমের পূর্বের পাটনার জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল লি: বিবেচনায় আসে । কিন্তু তথ্য মতে জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল পূর্বের রাশিয়ান ভ্যকসিনের জন্য টেন্ডার দাখিল না করে চায়নার একটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যকসিন সরবরাহ করার জন্য দরপত্র দাখিল করেছে। যদিও উক্ত কোম্পানীর ভ্যকসিনের ঝঃৎধরহ ধহফ ওহফরারফঁধষ খধন ঃবংঃ রিপোর্ট ও ন্যুনতম ২৪টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দরপত্রের চাহিদা মোতাবেক সঠিক নয়। কিন্তু তারপরেও নাসিমের মাধ্যমে/সুপারিশে পিডি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ডা: অমর জোতি চাকমা ও অন্য একজন নেতা জেনটেকের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। অপরাপর দরপত্র দাতাদের দাবী কারোর প্রতি বাহাস হয়ে যাতে শতকোটি টাকার নি¤œ মানের ভ্যকসিন ক্রয় করা না হয় সে বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তথ্য মতে জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল লি: অধিদপ্তরের অধীনে নাসিম গংদের সহযোগিতায় কয়েকশ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তবে কোন সময়ই উক্ত প্রতিষ্ঠান সময় মত মালামাল সরবরাহ না করলেও কর্তৃপক্ষ ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেন নি।এখনও পর্যন্ত প্রায় শত কোটি টাকার মালামাল নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যা সরবরাহ করার অপেক্ষায় রয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে কোন শো-কেইচ পর্যন্ত করেনি।