ঢাকা ০৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
নওগাঁয় নার্সিং ইনষ্টিটিউটে পরিক্ষায় নকল করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা: সমালোচনার জট কালিহাতীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত আলী’র স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে পররাষ্ট্র  উপদেষ্টার শোক গাজীপুরে জামায়াতের কর্মী ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সাভার আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রার্থী আলহাজ্ব মাদবর উপর সন্ত্রাসী হামলা গাজীপুরে সাংবাদিকদের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময় গাজীপুরে কর্পোরেট কোম্পানি থেকে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষায় আলোচনা সভা সিরাজদিখানে প্রবাসী যুবককে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা; ছিনিয়ে নিয়েছে টাকা- স্বর্ণালংকার গাজীপুরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১দফার প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত পঞ্চগড়ে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কর্তৃক শীত বস্ত্র বিতরণ
নিজেই করছেন ঠিকাদারী: কাজ না করেই বিল উত্তোলন: গণপূর্তের মি: টেনপার্সেন্ট নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লা

গণপূর্তের মি: টেনপার্সেন্ট নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহর খুঁটির জোর কোথায়?

বিশেষ প্রতিবেদক :

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর বাংলাদেশে নির্মাণ অঙ্গনের পথিকৃত। প্রায় দুই শত বছর ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তর দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মান নির্ধারণ করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠান সরকারী নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নেও এর ভূমিকা রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ একটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ¯’পতিরা এদের পাশাপাশি কাজ করে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা পেশাদারিত্ব ও কাজের মান গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তাই যেকোনো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ই সবার প্রথম পছন্দ। সরকারের প্রধান নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়া ছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে এটি প্রতিনিয়ত দেশের নির্মাণ শিল্পে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহের তদারকি ও গতিবৃদ্ধি করে যাচ্ছে । দেশ গঠনে এই দপ্তরের ভুমিকা অনস্বীকার্য। অথচ: কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে বদনাম হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। এমনই একজন কর্মকর্তা গণপুর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমান উল্লাহ আমান। তাকে এখন মি: ১০% নামে ডাকা হয়। গণপূর্তের ঠিকাদাররাই তাকে এই খেতাবে ভুষিত করেছেন। কথিত আছে তিনি ১০% কমিশন না নিয়ে কোন কাজই দেন না ঠিকাদারদের। আবার বিলের চেক দেওয়ার সময়ও ৫% কমিশন আদায় করে থাকেন।
তার বিরুদ্ধে গত ১৪-০১-২৪ তারিখে মামুন চৌধুরী নামক জনৈক ব্যক্তি বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার হোষ্টেল তত্ত্ববধায়ক এর রুমের ফ্লোর ও দেয়াল টাইলসসহ টয়লেট নির্মাণ করণ কাজ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে বাঁক নির্মান কাজ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিষ্টোপ্যাথলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের পিছনের বারান্দায় থাই গ্লাস স্থাপন কাজ, ছাদ দিয়ে পানিপড়া রোধকল্পে প্যাটেন্ট ষ্টোন ঢালাই এবং ডাক্তার টয়লেটের স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে তিনি সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন।
এ ছাড়া জাতীয় বক্ষব্যাধি ও ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বহিঃ বিভাগের বর্ধিত অংশে টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষারত রোগিদের জন্য সেড নির্মাণ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের অস্ত্রাগার ও বসবাসের জন্য সেমিপাকা বাসস্থান নির্মাণ। জাতীয় বক্ষব্যধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মুক্তিযুদ্ধো ওয়ার্র্রে বাহিরে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য নতুন করে পানির লাইন ও প্লাটফর্ম টাইলসসহ নির্মাণ করণ। জাতীয় বক্ষব্যধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জেনারেল ষ্টোরের পাশে টয়লেটসহ নতুন করে কক্ষ নির্মান ও আনুষঙ্গিক কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাসপাতালের বি-ব্লকে ল্যাবরেটরি ও নতুন টয়লেট সমুহের টাইলস করণ, স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ পানি সরবরাহ লাইনের কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ট্রন্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ বর্তমান স্থান থেকে ডি-ব্লকে হস্তান্তরিত করার লক্ষ্যে করিডোরের কলাপ্সিবল গেট স্থাপন ও বিভিন্ন রুমে টাইলস, থাই এলুমিনিয়াম পার্টিশনসহ অন্যান্য সংস্কারসহ সংযোজন কাজ।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বি-ব্লকের ৪র্থ তলায় হেমোটোলজি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দুইটি নতুন টয়লেট টাইলসসহ নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী এবং পানি সরবরাহ লাইনের কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এ ব্লকের নিচ তলার কক্ষে ইটের দেয়াল, থাই এলুমিনিয়াম পার্টিশন দিয়ে কক্ষ নির্মানসহ অন্যান্য সংষ্কার কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বি-ব্লকের ৭ম তলায় দুটি করে নতুন টয়লেট টাইলসসহ নির্মাণ ও বি- ব্লকের নিচ তলায় সিড়ির পিছনে মসজিদের পাশে অক্সিজেন সরবরাহের ম্যনিফোল্ড কক্ষ নির্মাণ। বি-ব্লক এবং ডি-ব্লকের মাঝে বৃক্ষ লিপির স্থাপনা গেইট, মাটি ভরাট করা, রাস্তা নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা। সি-ব্লকের ৫-৬ নং অপারেশন থিয়েটারের ড্যাম্প দেয়ালে আস্তর নির্মাণ, ভাঙ্গা টাইলস নবায়ন, দরজার চৌকাঠ, পাল্লা ও জানালায় থাই এলুমিনিয়াম, এবং স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা কাজে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আছে স্বাস্থ্য শিক্ষার বরাদ্দ আনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ে দালালি করে প্রয়োজনের মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দ আনেন এবং তা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগকারি উল্লেখ করেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ভবন নির্মাণ, স্থাপনা মেরামত ও ভবনের বিভিন্ন সংস্কারের জন্য ১০ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন উল্লেখযোগ্য কাজগুলো নিম্নরুপ: মহাখালী¯’ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ২য় শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল উচু করা, আস্তর নবায়ন, রঙ করা, গেট নির্মানসহ আনুষঙ্গিক কাজ। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির শরীফ মোহাম্মদ হলের দরজা জানালা মেরামত, জানালা ও করিডোরের গ্রিল পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ রঙ করা, থাই স্থাপন, স্যানিটারি পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী মেরামত ও ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজ। মহাখালী¯’ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ছাত্রী হোষ্টেলের ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বেঞ্চ স্থাপন, বিভিন্ন ফ্লোরের টাইলস স্থাপন, জানালায় থাই এর কাজ, পানির ফিল্টার স্থাপন, স্যানিটারি পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী মেরামত ও ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজ। একাডেমিক ভবনের রেইন ওয়াটার পাইপ প্রতিস্থাপন, প্রশাসনিক ভবনের মেরামত ও মহাখালী¯’ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ ভবনে চেয়ারম্যানের কক্ষ, বাথরুম সংস্কার, টাইলস স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক মেরামত কাজ।
এছাড়াও মহাখালী¯’ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ ভবনের সম্মুখে সৌন্দর্যবর্ধনে পুল নির্মাণ, রাস্তার পাশে ডাষ্টবিন নির্মাণ, বিভিন্ন কক্ষে ভিনিশিয়ান ব্লাইন্ড পদার্পণ্য । এবং ঢাকার মহাখালী¯’ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে ১টি ফ্লাগ ষ্ট্যান্ড, টয়লেট ও ষ্টোররুম নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধনে দৃষ্টিনন্দন বাগান তৈরি করে গ্রিল ও ওয়াকেওয়ে ¯’াপন, পানি নিষ্কাশন ব্যব¯’ার মেরামতসহ অসংখ্য কাজ।
সুত্র বলছে, মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের বিনিময়ে স্বা¯’্য শিক্ষার সকল কাজ আমান উল্লাহ আমানের পছন্দের মাত্র ৩/৪ জন ঠিকাদার পেয়ে থাকেন। এমনকি একই দপ্তরে চাকরি করলেও সরকারি আচরণবিধি লংঘন করে নিজেও ঠিকাদারি করেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ আছে। এখানেই থেমে নেই তার দুর্নীতি, বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা তুলে ঠিকাদারের যোগসাজশে ভাগাভাগি করে নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,২০২২/২৩ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪ টি প্রকল্পে ৪৪ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে।
সুত্র বলছে গণপুর্ত অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাস্তবায়নাধীন সে সব প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ৪৫ টি প্রকল্পে অশুভংকরের ফাঁকি দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ। এই সব প্রকল্প গণপুর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হলেও সুকৌশলে পুনরায় সেগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪ টি প্রকল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজ না করেই সম্পুর্ন টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন তিনি। এ সকল বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার অফিস ও মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
এ দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত ও অনুসন্ধান) জানান, এ ধরণের অভিযোগ প্রায়ই জমা পড়ে দুদকের অভিযোগ সেলে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি করা একটি গুরুতর অপরাধ। আমরা এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেই না।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

নওগাঁয় নার্সিং ইনষ্টিটিউটে পরিক্ষায় নকল করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা: সমালোচনার জট

নিজেই করছেন ঠিকাদারী: কাজ না করেই বিল উত্তোলন: গণপূর্তের মি: টেনপার্সেন্ট নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লা

গণপূর্তের মি: টেনপার্সেন্ট নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহর খুঁটির জোর কোথায়?

আপডেট টাইম : ০৭:৪৪:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

বিশেষ প্রতিবেদক :

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর বাংলাদেশে নির্মাণ অঙ্গনের পথিকৃত। প্রায় দুই শত বছর ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তর দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মান নির্ধারণ করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠান সরকারী নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নেও এর ভূমিকা রয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারসহ একটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ¯’পতিরা এদের পাশাপাশি কাজ করে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা পেশাদারিত্ব ও কাজের মান গণপূর্ত অধিদপ্তরের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। তাই যেকোনো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ই সবার প্রথম পছন্দ। সরকারের প্রধান নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়া ছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে এটি প্রতিনিয়ত দেশের নির্মাণ শিল্পে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহের তদারকি ও গতিবৃদ্ধি করে যাচ্ছে । দেশ গঠনে এই দপ্তরের ভুমিকা অনস্বীকার্য। অথচ: কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে বদনাম হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। এমনই একজন কর্মকর্তা গণপুর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমান উল্লাহ আমান। তাকে এখন মি: ১০% নামে ডাকা হয়। গণপূর্তের ঠিকাদাররাই তাকে এই খেতাবে ভুষিত করেছেন। কথিত আছে তিনি ১০% কমিশন না নিয়ে কোন কাজই দেন না ঠিকাদারদের। আবার বিলের চেক দেওয়ার সময়ও ৫% কমিশন আদায় করে থাকেন।
তার বিরুদ্ধে গত ১৪-০১-২৪ তারিখে মামুন চৌধুরী নামক জনৈক ব্যক্তি বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার হোষ্টেল তত্ত্ববধায়ক এর রুমের ফ্লোর ও দেয়াল টাইলসসহ টয়লেট নির্মাণ করণ কাজ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে বাঁক নির্মান কাজ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিষ্টোপ্যাথলজি ও ব্লাড ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের পিছনের বারান্দায় থাই গ্লাস স্থাপন কাজ, ছাদ দিয়ে পানিপড়া রোধকল্পে প্যাটেন্ট ষ্টোন ঢালাই এবং ডাক্তার টয়লেটের স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে তিনি সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন।
এ ছাড়া জাতীয় বক্ষব্যাধি ও ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের বহিঃ বিভাগের বর্ধিত অংশে টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষারত রোগিদের জন্য সেড নির্মাণ। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের অস্ত্রাগার ও বসবাসের জন্য সেমিপাকা বাসস্থান নির্মাণ। জাতীয় বক্ষব্যধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মুক্তিযুদ্ধো ওয়ার্র্রে বাহিরে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য নতুন করে পানির লাইন ও প্লাটফর্ম টাইলসসহ নির্মাণ করণ। জাতীয় বক্ষব্যধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জেনারেল ষ্টোরের পাশে টয়লেটসহ নতুন করে কক্ষ নির্মান ও আনুষঙ্গিক কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাসপাতালের বি-ব্লকে ল্যাবরেটরি ও নতুন টয়লেট সমুহের টাইলস করণ, স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ পানি সরবরাহ লাইনের কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ট্রন্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ বর্তমান স্থান থেকে ডি-ব্লকে হস্তান্তরিত করার লক্ষ্যে করিডোরের কলাপ্সিবল গেট স্থাপন ও বিভিন্ন রুমে টাইলস, থাই এলুমিনিয়াম পার্টিশনসহ অন্যান্য সংস্কারসহ সংযোজন কাজ।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বি-ব্লকের ৪র্থ তলায় হেমোটোলজি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দুইটি নতুন টয়লেট টাইলসসহ নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী এবং পানি সরবরাহ লাইনের কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এ ব্লকের নিচ তলার কক্ষে ইটের দেয়াল, থাই এলুমিনিয়াম পার্টিশন দিয়ে কক্ষ নির্মানসহ অন্যান্য সংষ্কার কাজ। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বি-ব্লকের ৭ম তলায় দুটি করে নতুন টয়লেট টাইলসসহ নির্মাণ ও বি- ব্লকের নিচ তলায় সিড়ির পিছনে মসজিদের পাশে অক্সিজেন সরবরাহের ম্যনিফোল্ড কক্ষ নির্মাণ। বি-ব্লক এবং ডি-ব্লকের মাঝে বৃক্ষ লিপির স্থাপনা গেইট, মাটি ভরাট করা, রাস্তা নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা। সি-ব্লকের ৫-৬ নং অপারেশন থিয়েটারের ড্যাম্প দেয়ালে আস্তর নির্মাণ, ভাঙ্গা টাইলস নবায়ন, দরজার চৌকাঠ, পাল্লা ও জানালায় থাই এলুমিনিয়াম, এবং স্যানিটারি ফিটিংস নবায়নসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা কাজে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আছে স্বাস্থ্য শিক্ষার বরাদ্দ আনার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ে দালালি করে প্রয়োজনের মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দ আনেন এবং তা আত্মসাৎ করেন।
অভিযোগকারি উল্লেখ করেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ভবন নির্মাণ, স্থাপনা মেরামত ও ভবনের বিভিন্ন সংস্কারের জন্য ১০ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন উল্লেখযোগ্য কাজগুলো নিম্নরুপ: মহাখালী¯’ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ২য় শ্রেণির কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল উচু করা, আস্তর নবায়ন, রঙ করা, গেট নির্মানসহ আনুষঙ্গিক কাজ। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির শরীফ মোহাম্মদ হলের দরজা জানালা মেরামত, জানালা ও করিডোরের গ্রিল পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ রঙ করা, থাই স্থাপন, স্যানিটারি পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী মেরামত ও ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজ। মহাখালী¯’ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ছাত্রী হোষ্টেলের ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বেঞ্চ স্থাপন, বিভিন্ন ফ্লোরের টাইলস স্থাপন, জানালায় থাই এর কাজ, পানির ফিল্টার স্থাপন, স্যানিটারি পয়ঃনিষ্কাশন প্রনালী মেরামত ও ফিটিংস পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজ। একাডেমিক ভবনের রেইন ওয়াটার পাইপ প্রতিস্থাপন, প্রশাসনিক ভবনের মেরামত ও মহাখালী¯’ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ ভবনে চেয়ারম্যানের কক্ষ, বাথরুম সংস্কার, টাইলস স্যানিটারি ফিটিংস পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক মেরামত কাজ।
এছাড়াও মহাখালী¯’ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ ভবনের সম্মুখে সৌন্দর্যবর্ধনে পুল নির্মাণ, রাস্তার পাশে ডাষ্টবিন নির্মাণ, বিভিন্ন কক্ষে ভিনিশিয়ান ব্লাইন্ড পদার্পণ্য । এবং ঢাকার মহাখালী¯’ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে ১টি ফ্লাগ ষ্ট্যান্ড, টয়লেট ও ষ্টোররুম নির্মাণ, সৌন্দর্যবর্ধনে দৃষ্টিনন্দন বাগান তৈরি করে গ্রিল ও ওয়াকেওয়ে ¯’াপন, পানি নিষ্কাশন ব্যব¯’ার মেরামতসহ অসংখ্য কাজ।
সুত্র বলছে, মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের বিনিময়ে স্বা¯’্য শিক্ষার সকল কাজ আমান উল্লাহ আমানের পছন্দের মাত্র ৩/৪ জন ঠিকাদার পেয়ে থাকেন। এমনকি একই দপ্তরে চাকরি করলেও সরকারি আচরণবিধি লংঘন করে নিজেও ঠিকাদারি করেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ আছে। এখানেই থেমে নেই তার দুর্নীতি, বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা তুলে ঠিকাদারের যোগসাজশে ভাগাভাগি করে নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,২০২২/২৩ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪ টি প্রকল্পে ৪৪ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে।
সুত্র বলছে গণপুর্ত অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাস্তবায়নাধীন সে সব প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ৪৫ টি প্রকল্পে অশুভংকরের ফাঁকি দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আমান উল্লাহ। এই সব প্রকল্প গণপুর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হলেও সুকৌশলে পুনরায় সেগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরামত শাখা কর্তৃক অনুমোদিত ১৮৪ টি প্রকল্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজ না করেই সম্পুর্ন টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন তিনি। এ সকল বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার অফিস ও মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
এ দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত ও অনুসন্ধান) জানান, এ ধরণের অভিযোগ প্রায়ই জমা পড়ে দুদকের অভিযোগ সেলে। আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি করা একটি গুরুতর অপরাধ। আমরা এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেই না।