মঞ্জরুল ইসলাম রতন :
মাঠ পর্যায়ে ভূমি অফিসগুলোতে দুর্নীতি রোধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে একটি সার্কুলার জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
গত ৪ নভেম্বর (সোমবার) ‘জনবান্ধব ভূমি সেবায় গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বেও রয়েছেন।
এই উপদেষ্টা বলেন, যে পর্যায়ে এখন ভূমি মন্ত্রণালয় আছে- খতিয়ান, খাজনা দেওয়া, মিউটেশন ইত্যাদি বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার আদৌ হয়নি। আমি বলবো না অল্প-বিস্তর হয়েছে, আদৌ হয়নি। ফলে মানুষ এখনো ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘিরে যে দুর্নীতির চক্র, আমরা আজীবন শুনে আসছি যে, তহসিলদারের দৌরাত্ম্যে গ্রামের মানুষ ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকে। ১০০ টাকার খাজনা দিতে তাকে এক হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিবিড় তদারকি দরকার।
‘আমরা একটা সার্কুলার দিয়ে দেবো এখানে যেহেতু সচিব সাহেব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আছেন- ভূমি অফিসের কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে জড়ান কিংবা আলাপ-আলোচনা করেন যেন তার বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যায়।’ বলেন হাসান আরিফ।
ভূমি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের কথা উঠে আসে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এই অফিসটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রতিবেদনে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে আমি ভূমি রেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে এসেছিলাম, কারণ তখন আমি একই সঙ্গে ভূমি এবং আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলাম। তখন কাজটা করা আমার জন্য সহজ ছিল। কিন্তু সেটা পরবর্তীকালে আর থাকেনি। পরবর্তী সরকার আসার পর সেটা আবার বদল হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা আবার নতুন করে এখন চেষ্টা করতে পারি।
‘ভূমি আপিল বোর্ডের মামলার কথা বলা হয় যে সেখানে দেরি হয়। এর কারণ হচ্ছে যে এখানে ফিজিক্যালি সবাইকে আসতে হয়। আমরা এখন এটা অনলাইনে করার ব্যবস্থা করছি। আগামীতে অনলাইনেও শুনানি হবে। কাউকে সুদূর টেকনাফ বা তেতুলিয়া থেকে আসতে হবে না। জেলা হোক কিংবা উপজেলা পর্যায়ে থেকে হোক মামলা পরিচালনা করা যাবে। অনলাইনে শুনানির মাধ্যমেই রায় দেওয়া হবে। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবো।’ যোগ করেন উপদেষ্টা।
হাসান আরিফ আরও বলেন, আরেকটি বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে দেখা যেতে পারে, সেটি হচ্ছে একটি জায়গায় তহসিলদার সাধারণত তিন বছর থাকে, এখানে তিন বছরের জায়গায় যদি আমরা দুই বছর করতে পারি।
উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু মাঠ পর্যায়ে মানুষের ভোগান্তিটা সরাসরি হয়। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তা এটা কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে পারি, সেটা আপনারা করে দেখান। শুধু জিরো টলারেন্স অফিসে বসে বললে হবে না, মাঠ পর্যায়ের এটা দেখাতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহ. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব ও সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক উপস্থিত ছিলেন