ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ফেসবুক পোস্টের জেরে নওগাঁয় কলেজ শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ তরুন প্রজন্মের চিন্তা চেতনাকে নিয়ে কাজ করতে হবে- আমিনুল হক জয়পুরহাটে ক্ষেতলালে নিখোঁজের ৯ দিন পর আলোচিত কাফির লাশ উদ্ধার সিরাজদিখানে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও হামলা: আহত-৫ আদমদীঘিতে প্রতারণা করে বোনদের সম্পত্তি লিখে নিল ভাই মিরপুর ইস্টার্ণ হাউজিং ডাইং ফ্যাক্টারিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মহাউৎসব প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় গ্রেফতার বিতর্কিত নারী সংস্কার কমিশন বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলন- মাওলানা ইমতিয়াজ আলম রাজউককে জনবান্ধব করতে আইন ও বোর্ডের গঠন বদলাতে হবে- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সিরাজদিখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা

আমাকে অপসারণ করা হয়নি, পদত্যাগ করেছি: উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, তাকে অপসারণ করা হয়নি। স্থায়ী চাকরির চেষ্টা করছেন তিনি। এজন্য পদত্যাগ করেছেন। গণমাধ্যমে তার পদত্যাগকে অপসারণ হিসেবে ভুলভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। সেই সঙ্গে পদত্যাগের কারণ তুলে ধরেছেন তিনি। মোয়াজ্জেম হোসেন তার পদত্যাগপত্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অব্যাহতিপত্রের প্রজ্ঞাপনের ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে যা লিখেছেন তা নিচে দেওয়া হলো-

আমার পদত্যাগ প্রসঙ্গ
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র। সেই আন্দোলনে যোগদান করি এবং পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে পরিষদের সাথে যুক্ত হই। মাগুরা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক, পরবর্তীতে সভাপতি ছিলাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসাংগঠনিক সম্পাদক হই।

২০২৩ সালে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে রাজনীতি ছেড়ে বিসিএস প্রিপারেশন নিই। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাস করি। একইসাথে ব্যাংকের অফিসার ক্যাশের প্রিলি পাস করি। জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় আমার ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষা হয় এবং আমি অংশগ্রহণ করি। আন্দোলন পরবর্তী সরকারে আসিফ মাহমুদ দায়িত্বে আসার পর আমাকে কাজ করার অফার করা হলে আমি স্পষ্টভাবে বলি আমার স্থায়ী ক্যারিয়ারের প্রশ্নে যেকোন সময় চাকরি ছেড়ে দিব।

গত ১০ মার্চ ২০২৫ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করলে আমি উত্তীর্ণ হই। এরপর বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয় ৮ মে এবং ব্যাংকের ভাইভার তারিখ ২২ মে। তাই আমি গত মার্চের ২৫ তারিখে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কাছে পদত্যাগপত্রটি জমা দিই। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ৮ এপ্রিল পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং যেহেতু নিয়োগ প্রদান ও বাতিল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক হয়ে থাকে এজন্য গত ২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এরপর গণমাধ্যমে পদত্যাগকে অপসারণ হিসেবে ভুল ভাবে উত্থাপন করা হয়।

এসব নিয়ে একদল আমাকে আমেরিকার বাড়িওয়ালা, একদল দুবাইতে রিসোর্ট মালিক বানিয়ে ফেলতেছেন। কেউ কেউ আবার ৩০০ কোটি আবার কেউ ৩০০০ কোটি টাকার মালিক বানাচ্ছেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলি গত ৫ আগস্টের পর আমি এবং আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কারো সম্পদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে থাকলে আপনারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন অথবা অভিযোগ জানাতে পারেন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা নিজেই অভিযোগ আহ্বান করেছেন। দয়া করে সামাজিকভাবে কাউকে অযথা হয়রানি করবেন না।

দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে অনেক পরিচিত প্রবাসী আমাকে পোশাক গিফট করেছেন। এমনকি আমার ফোনটাও কিনে দিয়েছেন আমার বিভাগের প্রবাসী এলামনাই। এবং সরকারে থাকাকালে প্রয়োজনবোধে সরকারি গাড়িও ব্যবহার করেছি। সুতরাং এগুলো দেখে আমাকে যদি ভুলভাবে উপস্থাপন করেন তাহলে আমার প্রতি অন্যায় ছাড়া কিছুই করা হবে না।

আজকে একজন ফোন করে বললেন তার দলের বেশিরভাগ মানুষ আমার উপর ক্ষ্যাপা। কারণ হিসেবে বলছেন আমার আচরণ। অর্থাৎ দায়িত্বে থাকাকালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিলে দেখা করার সুযোগ দিতাম না কিংবা সবার দাবি পূরণ করা সম্ভব ছিল না। তাদের জন্য বলব ভাই ওটা আমার দায়িত্ব ছিল, এতো এতো মানুষকে ম্যানেজ করা খুব সহজ কাজ ছিল না।

অনেকেই অভিযোগ করছেন আমার ভাব বেড়ে গিয়েছিল। কারণ আমি ফোন ধরতাম না, মেসেজের রিপ্লাই দিতাম না। এই সকল অভিযোগ কেন্দ্রীভূত হয়ে আমাকে চোর বানাচ্ছেন। অথচ এমন অসংখ্য দিন গেছে দুপুরের খাবার বাসায় গিয়ে খেয়েছি। যাইহোক আমি দেশের জন্য, মানুষের জন্য যা করেছি বা করার চেষ্টা করেছি তার প্রতিদান আল্লাহ নিশ্চই দিবেন ইনশাআল্লাহ।

মোয়াজ্জেমের ফেসবুক পোস্ট নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সেই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। পদত্যাগ পত্রটি গৃহীত হলে আদেশ কার্যকর করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অপসারণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তা সত্যি নয়। মাননীয় উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে যে-কোন অভিযোগ থাকলে তা অভিযোগ আহ্বান সংক্রান্ত ইমেইলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে (এডমিন)’। গত বছরের ১৪ আগস্ট উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অভিপ্রায় অনুযায়ী মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে; পিতা- মো. আজিজার মন্ডল, মাতা- আনোয়ারা বেগম, গ্রাম-দক্ষিণপাড়া, ডাকঘর, বিনোদপুর, উপজেলা-মহম্মদপুর, জেলা-মাগুরা; জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ২২০০০/ থেকে ৫৩০৬০/ টাকা বেতন স্কেলে (৯ম গ্রেড) তার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যতদিন এ পদ অলংকৃত করবেন অথবা মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে সহকারী একান্ত সচিব পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন ততদিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে।’ গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে ১৭ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আসিফ।

অথচ নেটিজনদের কেউ কেউ বলছেন, এসব তার স্রেফ ভন্ডামী। সচিবালয়ে গেলে দেখা যায়, এপিএসের চেয়ারে বসে নিজেকে তিনি প্রধান উপদেষ্টার চেয়েও বেশি পাওয়ারফূল ভাবতেন। অথচ কদিন আগেও বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য যাদের থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদেরও তিনি পাত্তা দিতেন না। কেউ কেউ লিখছেন, এপিএস হিসেবে তার বেসরকারি বিদেশ ভ্রমণ তদন্ত করা প্রয়োজন।

গণঅধিকার অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান তার ফেসবুক আইডতে লিখেন, মোয়াজ্জেম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হন। এপিএস হওয়ার পরে নিজের অতীত ভুলে বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন। তিনি এপিএস হয়ে হাতির পাঁচ পা দেখা শুরু করছিলেন। আমি মনে করি, শুধু অব্যাহতি কোন সমাধান নয়, বরং সবকিছুর তদন্ত হওয়া জরুরি। তিনি এপিএস হয়ে কার নির্দেশনায় কি কি করেছেন, ডুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যে কেন বেসরকারি সফরে গিয়েছিলেন, সবকিছুর তদন্ত হতে হবে। তদন্ত হলে আরও বেশকিছু রাঘববোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ফেসবুক পোস্টের জেরে নওগাঁয় কলেজ শিক্ষার্থীকে মারপিটের অভিযোগ

আমাকে অপসারণ করা হয়নি, পদত্যাগ করেছি: উপদেষ্টা আসিফের এপিএস মোয়াজ্জেম

আপডেট টাইম : ০৮:০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিবের (এপিএস) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, তাকে অপসারণ করা হয়নি। স্থায়ী চাকরির চেষ্টা করছেন তিনি। এজন্য পদত্যাগ করেছেন। গণমাধ্যমে তার পদত্যাগকে অপসারণ হিসেবে ভুলভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। সেই সঙ্গে পদত্যাগের কারণ তুলে ধরেছেন তিনি। মোয়াজ্জেম হোসেন তার পদত্যাগপত্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অব্যাহতিপত্রের প্রজ্ঞাপনের ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে যা লিখেছেন তা নিচে দেওয়া হলো-

আমার পদত্যাগ প্রসঙ্গ
২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র। সেই আন্দোলনে যোগদান করি এবং পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে পরিষদের সাথে যুক্ত হই। মাগুরা জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক, পরবর্তীতে সভাপতি ছিলাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসাংগঠনিক সম্পাদক হই।

২০২৩ সালে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে রাজনীতি ছেড়ে বিসিএস প্রিপারেশন নিই। ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাস করি। একইসাথে ব্যাংকের অফিসার ক্যাশের প্রিলি পাস করি। জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় আমার ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষা হয় এবং আমি অংশগ্রহণ করি। আন্দোলন পরবর্তী সরকারে আসিফ মাহমুদ দায়িত্বে আসার পর আমাকে কাজ করার অফার করা হলে আমি স্পষ্টভাবে বলি আমার স্থায়ী ক্যারিয়ারের প্রশ্নে যেকোন সময় চাকরি ছেড়ে দিব।

গত ১০ মার্চ ২০২৫ ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করলে আমি উত্তীর্ণ হই। এরপর বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয় ৮ মে এবং ব্যাংকের ভাইভার তারিখ ২২ মে। তাই আমি গত মার্চের ২৫ তারিখে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কাছে পদত্যাগপত্রটি জমা দিই। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ৮ এপ্রিল পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং যেহেতু নিয়োগ প্রদান ও বাতিল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক হয়ে থাকে এজন্য গত ২২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এরপর গণমাধ্যমে পদত্যাগকে অপসারণ হিসেবে ভুল ভাবে উত্থাপন করা হয়।

এসব নিয়ে একদল আমাকে আমেরিকার বাড়িওয়ালা, একদল দুবাইতে রিসোর্ট মালিক বানিয়ে ফেলতেছেন। কেউ কেউ আবার ৩০০ কোটি আবার কেউ ৩০০০ কোটি টাকার মালিক বানাচ্ছেন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলি গত ৫ আগস্টের পর আমি এবং আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের কারো সম্পদ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে থাকলে আপনারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন অথবা অভিযোগ জানাতে পারেন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা নিজেই অভিযোগ আহ্বান করেছেন। দয়া করে সামাজিকভাবে কাউকে অযথা হয়রানি করবেন না।

দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে অনেক পরিচিত প্রবাসী আমাকে পোশাক গিফট করেছেন। এমনকি আমার ফোনটাও কিনে দিয়েছেন আমার বিভাগের প্রবাসী এলামনাই। এবং সরকারে থাকাকালে প্রয়োজনবোধে সরকারি গাড়িও ব্যবহার করেছি। সুতরাং এগুলো দেখে আমাকে যদি ভুলভাবে উপস্থাপন করেন তাহলে আমার প্রতি অন্যায় ছাড়া কিছুই করা হবে না।

আজকে একজন ফোন করে বললেন তার দলের বেশিরভাগ মানুষ আমার উপর ক্ষ্যাপা। কারণ হিসেবে বলছেন আমার আচরণ। অর্থাৎ দায়িত্বে থাকাকালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিলে দেখা করার সুযোগ দিতাম না কিংবা সবার দাবি পূরণ করা সম্ভব ছিল না। তাদের জন্য বলব ভাই ওটা আমার দায়িত্ব ছিল, এতো এতো মানুষকে ম্যানেজ করা খুব সহজ কাজ ছিল না।

অনেকেই অভিযোগ করছেন আমার ভাব বেড়ে গিয়েছিল। কারণ আমি ফোন ধরতাম না, মেসেজের রিপ্লাই দিতাম না। এই সকল অভিযোগ কেন্দ্রীভূত হয়ে আমাকে চোর বানাচ্ছেন। অথচ এমন অসংখ্য দিন গেছে দুপুরের খাবার বাসায় গিয়ে খেয়েছি। যাইহোক আমি দেশের জন্য, মানুষের জন্য যা করেছি বা করার চেষ্টা করেছি তার প্রতিদান আল্লাহ নিশ্চই দিবেন ইনশাআল্লাহ।

মোয়াজ্জেমের ফেসবুক পোস্ট নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। সেই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। পদত্যাগ পত্রটি গৃহীত হলে আদেশ কার্যকর করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অপসারণ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তা সত্যি নয়। মাননীয় উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে যে-কোন অভিযোগ থাকলে তা অভিযোগ আহ্বান সংক্রান্ত ইমেইলে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে (এডমিন)’। গত বছরের ১৪ আগস্ট উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অভিপ্রায় অনুযায়ী মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে; পিতা- মো. আজিজার মন্ডল, মাতা- আনোয়ারা বেগম, গ্রাম-দক্ষিণপাড়া, ডাকঘর, বিনোদপুর, উপজেলা-মহম্মদপুর, জেলা-মাগুরা; জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ২২০০০/ থেকে ৫৩০৬০/ টাকা বেতন স্কেলে (৯ম গ্রেড) তার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যতদিন এ পদ অলংকৃত করবেন অথবা মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে সহকারী একান্ত সচিব পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন ততদিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে।’ গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমে ১৭ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হওয়ার পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মোয়াজ্জেমকে সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আসিফ।

অথচ নেটিজনদের কেউ কেউ বলছেন, এসব তার স্রেফ ভন্ডামী। সচিবালয়ে গেলে দেখা যায়, এপিএসের চেয়ারে বসে নিজেকে তিনি প্রধান উপদেষ্টার চেয়েও বেশি পাওয়ারফূল ভাবতেন। অথচ কদিন আগেও বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য যাদের থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদেরও তিনি পাত্তা দিতেন না। কেউ কেউ লিখছেন, এপিএস হিসেবে তার বেসরকারি বিদেশ ভ্রমণ তদন্ত করা প্রয়োজন।

গণঅধিকার অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান তার ফেসবুক আইডতে লিখেন, মোয়াজ্জেম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হন। এপিএস হওয়ার পরে নিজের অতীত ভুলে বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন। তিনি এপিএস হয়ে হাতির পাঁচ পা দেখা শুরু করছিলেন। আমি মনে করি, শুধু অব্যাহতি কোন সমাধান নয়, বরং সবকিছুর তদন্ত হওয়া জরুরি। তিনি এপিএস হয়ে কার নির্দেশনায় কি কি করেছেন, ডুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যে কেন বেসরকারি সফরে গিয়েছিলেন, সবকিছুর তদন্ত হতে হবে। তদন্ত হলে আরও বেশকিছু রাঘববোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসবে।