নাদিম আহমেদ অনিক, নিজস্ব প্রতিনিধি-
নওগাঁর বদলগাছীতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজি চাল নিয়ে চালবাজী চলছে। ডিলারেরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করে ব্যাংক চালানের কপি জমা নিচ্ছেনা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
এ নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ৮ দিন অতিবাহিত হলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। ফলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির প্রায় ৭৭৫৫ জন উপকারভোগী চাল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ ইউনিয়নে দুটি করে মোট ১৬ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের জন্য ১৬ জন ডিলার নিয়োগ রয়েছে। গত ৩১ শে আগস্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত একটি পত্র যাহার স্মারক নম্বর-১৩.০১.৬৪০৬.০৩৬.৫৭.০০১.২৩.২৩.৩০৯ এর মাধ্যমে প্রতিটি ডিলারকে চিঠি ইসু করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে চলতি সেপ্টেম্বর-২৪ ইং মাসের চাল অত্র মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ব্যাংকে টাকা জমা করে চাল যথারীতি উত্তোলন করার জন্য বলা হলো।
সেই মোতাবেক ডিলারেরা চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকে টাকা জমা করবে মর্মে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গোপন কোড নম্বর চাইতে গেলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারি মৌখিকভাবে জানান, সকল ডিলারদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির মিটিং হবে তার পর মিটিং এর সিদ্ধ্যান্ত অনুয়ায়ী আপনারা ব্যাংকে টাকা জমা করবেন।
এ বিষয়ে যথারীতি ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪ টার সময় উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহবুব হাসান তার কার্যালয়ে জরুরী মিটিং এ বসেন। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মিটিং শেষে সকল ডিলারদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ হয়েছে তা তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পূর্ব পর্যন্ত যারা ডিলার রয়েছেন তাদেরকে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে চালান কপি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা করতে বলা হয়।
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিলাররা পরের দিন ১০ সেপ্টেম্বর ব্যাংকে টাকা জমা করে চালানের কপি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দিতে অফিসে গিয়ে দেখতে পান উপজেলা খদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারি অফিসে আসেননি। এবং চালান কপি অফিসের অন্য কর্মকর্তারাও জমা নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ৮ দিন অতিবাহিত হলেও বিষয়টি কোন সুরহা হয়নি। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা ধরে চাল পাওয়া নিয়ে উপজেলার ৭৭৫৫ জন উপকার ভোগীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
অপরদিকে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগী উপজেলার তেজাপাড়া গ্রামের নন্দলাল জানন, প্রতিমাসের ১০/১২ তারিখের মধ্যে আমরা ১৫ টাকা কেজির চাল পেয়ে যেতাম। এখন মাসের ১৭ দিন চলে গেলে ও চাল পাচ্ছিনা। যা আমার পরিবারের জন্য খুব কষ্টকর।
ডাঙ্গিসাড়া গ্রামের রশিদা, গাজীমদ্দীন, বয়তুল ও কাদবাড়ী গ্রামের ছালমাসহ অনেক উপকারভোগী বলেন একই কষ্টের কথা। তাদের দাবী আমরা গরিব মানুষ রাজনীতি বুঝিনা। চাল পেলেই পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে পারি এতেই আমরা সুখী। আজ বেশ কিছু দিন হয়ে যাচ্ছে আমরা চাল পাচ্ছিনা। চাল না পাওয়ায় আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাপন করছি।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মেহেদি হাসান, এরশাদ, রানা, মেহেদি, জামিলসহ সকলেই জানায়, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক উপজেলার কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তির কথা শুনে আমাদের ব্যাংক চালান জমা নিচ্ছেনা এবং চাল উত্তোলন করতে না দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারির কাছে জানতে চাইলে তিনি দাম্ভিকতার সুরে বলেন, আমি এ বিষয়ে মুখ খুলতে পারবো না। কেন মূখ খুলতে পারবেন না বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ইউএনও স্যার আপনারা সেখানে যান। অভিযোগ উঠেছে আপনি নাকি অন্য কিছু ব্যক্তিদের নতুন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের সাথে হাত মিলিয়ে খাদ্যবান্ধবের চাল নিয়ে চালবাজী শুরু করছেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর প্রদান করেননি।
উপজেলা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহবুব হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিবৃতকর অবস্থায় আছি। কি ধরণের বিবৃতকর বোধ করছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলে স্থানীয় লিডারদের চাপের মুখে রয়েছি। তবে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উত্তোলন সময় আগামী ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্দি করা হয়েছে এবং ৩০ সেপ্টম্বরের মধ্যে উপকারভোগীদের নিকট চাল বিতরণ করার সুযোগ রয়েছে। ডিলারেরা এই সময়ের মধ্যে চাল উত্তোলন ও বিতরণ করতে পারবে।
বদলগাছী খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলারেরা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে ব্যাংক চালান জমা করতে ও চাল উত্তোলন করতে পারছেনা কেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওইটা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিষয়।